ঢাকায় শুরু হয়েছে চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন। বিশ্বের ৫০টি দেশের শতাধিক বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এতে অংশ নিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এমপাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচুনিটি’ শিরোনামে স্টার্টআপ কানেক্ট সেশনের মাধ্যমে চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করা হয়।
শেয়ারট্রিপের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও সাদিয়া হকের সঞ্চালনায় ‘এমপাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচুনিটি’ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিভাগের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং আইসিটি বিভাগের সচিব ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান শিশ হায়দার চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রেকর্ড করা বক্তব্য দেন লিংকডইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্টার্টআপ খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে শুধু স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে মূলধন জোগান দেওয়া হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান।
তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে স্টার্টআপ খাতের এ তহবিল বিতরণ করা হবে। স্টার্টআপগুলোর লাভ এক দিনেই আসে না। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, আপনাকে অধ্যবসায় করতে হবে। আমার সন্তানেরও স্টার্টআপ কোম্পানি আছে। মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশি বংশো™ূ¢ত কানাডার নাগরিক তানভীর আলী। প্রবন্ধে বলা হয়, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে উদ্ভাবনী স্টার্টআপ উদ্যোগের চাহিদা বাড়ছে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দেশে এখনো এই খাতে বিনিয়োগ কম।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমাদের স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো কীভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায় তা নিয়ে এ কমিউনিটি থেকে শুনতে চাই। বিডা ব্যবসা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কাজ করছে। এতে দেশের বিনিয়োগ বাড়বে। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পাওয়াসহ সরকারি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বেশি। প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
প্রধান উপদেষ্টার আইসিটিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, আমরা ইন্টারনেটের দাম কমানো নিয়ে কাজ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, ইন্টারনেটের দাম কমানোর মাধ্যমে স্টার্টআপ কোম্পানির সুযোগ বাড়বে। ইন্টারনেট আর কখনো বন্ধ হবে না। ভবিষ্যৎ সরকার যাতে এটা বন্ধ করতে না পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। মোবাইল কোম্পানিও ইন্টারনেট বন্ধ করার সুযোগ পাবে না। টেলিকম অ্যাক্ট ২০০১ এ ইন্টারনেট বন্ধ করার বিধান আছে সেটি বাতিল করার জন্য কাজ করছি। পরবর্তী সরকারগুলো যাতে আইনের সুযোগ নিয়ে ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে চার দিনের এ বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করছে। গতকাল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রূপসী বাংলা গ্র্যান্ড বলরুমে ১০টি সেশন, ক্রিস্টাল বলরুমে ৫টি সেশন, পার্ল রুমে ৩টি মাস্টার ক্লাস ও ১টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সম্মেলনের প্রথম দিন শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি জানান, বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ কানেক্ট ২০২৫’ নামের অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে দেড় হাজারের বেশি নতুন উদ্যোক্তা অংশ নেন। এতে ৭০ জন বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, এ সরকার কখনো ইন্টারনেট বন্ধ করবে না। এটিকে সরকার নাগরিক অধিকার মনে করছে।