বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনে বিনিয়োগ ও শিল্প সম্ভাবনা যাচাই করতে অর্ধশতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) এবং মিরসরাই জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোরিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা কেইপিজেড পৌঁছেন। তারা সেখানকার বিভিন্ন কারখানা, বিনিয়োগ পরিবেশ, আইটি জোনসহ পুরো প্রকল্প ঘুরে দেখেন। এ সময় বিডা ও বেজা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দলটি মিরসরাই জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন। বিনিয়োগকারীরা দুটি প্রকল্পই বেশ আগ্রহ নিয়ে ঘুরে দেখেছেন।
বিদেশি প্রতিনিধিদলের পরিদর্শন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ৬০ জনের মতো বিনিয়োগকারী চট্টগ্রাম কেইপিজেড ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে এসেছেন। বাংলাদশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা সরেজমিন দেখেছেন, বিনিয়োগ করলে কীভাবে উপকৃত হতে পারেন। বাংলাদেশ একটি অফুরন্ত সম্ভাবনার দেশ। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তাদের হাতে-কলমে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে নিয়ে আসার একটি বড় উদ্দেশ্য হলো- চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে যে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে বা তা আরও বাড়ানোর যে চেষ্টা হচ্ছে, সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। যাতে তাদের পক্ষে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই দেশে বড় আকারের কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন।
তিনি জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনই বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়তো নেবেন না। বিনিয়োগের বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি। তারা সামনে ১০-১৫ বছর পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী হবে, তা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা তাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি যে, পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশে যদি বিনিয়োগ করেন তাহলে তারা যেমন সুফল পাবেন তেমনি বাংলাদেশও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে। আমরা আশা করছি এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা তারা সম্মেলন থেকে পাবেন।
বিশেষ ফ্লাইটে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসেন। প্রথমেই ইয়াংওয়ান করপোরেশনের আমন্ত্রণে তারা কেইপিজেডে যান। বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখার পাশাপাশি বর্তমান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আড়াই হাজার একরের এ ইপিজেডে বর্তমানে ৮ শতাধিক একর জায়গায় ৪৮টি কারখানা রয়েছে, যার বেশির ভাগই তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া জুতা ও ব্যাগের কারখানাও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক। মোট ১৫টি কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে এখানে। আনোয়ারা ইপিজেড হলো প্রাইভেট সেক্টরে একমাত্র অপারেশনাল ইপিজেড। প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে। পানি, বিদ্যুৎ, ইউটিলিটি সুবিধা ও পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পরিদর্শন শেষে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইয়াংওয়ান করপোশেনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। এসময় তিনি বলেন, শুধু কেইপিজেড নয়, বাংলাদেশে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলস সেক্টরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
পরিদর্শনে আসা একাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী জানান, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অনেক উৎকৃষ্ট একটি স্থান। এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ দেখে তারা সন্তুষ্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এরচেয়ে ভালো বিনিয়োগের স্থান হয়না। মীরসরাই ইকোনোমিক জোনের প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক সাংবাদিকদের জানান, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল একটি বিশাল হাব। বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে এখানে। এটি ভবিষ্যতে ইকোনোমিক করিডোর হিসেবে আবির্ভূত হবে। এখানে মাল্টিমোডাল কানেকটিভিটি আছে। কিছু শিল্প-কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। আরও অনেক কারখানা পাইপলাইনে আছে। তারাও উৎপাদন শুরু করবে।