গাজায় ‘এখনই যুদ্ধ থামানোর’ জন্য ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে ২৮টি দেশ। উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের মতে, গাজায় ‘এক নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে মানুষের দুর্ভোগ’।
ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা মিত্রদের ভাষা যে কঠোর হয়ে উঠছে ক্রমেই এবং দেশটির বিচ্ছিন্নতাও বাড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে- এ যৌথ বিবৃতি তারই সর্বশেষ উদাহরণ। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ২৫ বলে উল্লেখ করা হয়েছে আল জাজিরাসহ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে এক দিনে কমপক্ষে আরও ১৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ১৫৫ জন। এতে অবরুদ্ধ এ উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৫৯ হাজার। সহায়তা নেওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৯৯ জন নিহত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। বার্তাসংস্থা আনাদোলু সোমবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের বর্বর সামরিক অভিযানে মারা যাওয়া ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ৫৯ হাজার ২৯ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে ২১ মাসের বেশি সময় পার হতে চলেছে গাজায় চলমান ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ। যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটির মধ্যে মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দার। এমন এক সময়ে সোমবার ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠমিত্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলো এ যৌথ বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে একটি সমঝোতাভিত্তিক অস্ত্রবিরতি, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তি এবং জরুরি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অল্প অল্প করে ত্রাণ সরবরাহ এবং ত্রাণপ্রত্যাশী শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের নৃশংসভাবে হত্যার নিন্দা জানাই আমরা। যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, ইসরায়েল সরকারের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা বিপজ্জনক, যা অস্থিরতা বাড়াচ্ছে এবং গাজাবাসীর মানবিক মর্যাদা কেড়ে নিচ্ছে। ইসরায়েল সরকার বেসামরিক জনগণকে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা না দিয়ে যা করছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে ইসরায়েলকে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো- যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, জাপান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড। দেশগুলোর পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। -বিবিসি
এদিকে মার্চে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহার করার পর থেকে গাজাজুড়ে ইসরায়েল হাজার হাজার ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহে পুরো শহর ও আশপাশের এলাকা ধ্বংস করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে আগে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করত। স্যাটেলাইট ছবিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেসব এলাকা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলে দাবি করেছে। এ ধ্বংসযজ্ঞের বড় একটি অংশ পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত করা হয়েছে। সেসব জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং অনেক ক্ষেত্রেই অক্ষত ভবন পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। - বিবিসি