গাজার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোয় খাবার আনতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে গত আট দিনে নিহত হয়েছে অন্তত ১০২ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে সর্বশেষ ঘটনায় গাজার রাফায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৭ জন। এছাড়া একই সময় দখলদার বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন আরও ৪৬০ জনের বেশি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে আলজাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স। এদিকে প্রাণহানির এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
দখলদাররা গাজায় আড়াই মাসের বেশি সময় অবরোধ আরোপ করে রেখেছিল। এরপর গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে একটি নতুন সংস্থা গাজার কিছু মানুষকে ত্রাণ দেওয়া শুরু করে। কিন্তু এ সংস্থার ত্রাণ কেন্দ্র থেকে বেশির ভাগ মানুষই খালি হাতে ফিরছেন। তার মধ্যে অনেকে আবার ফিরছেন লাশ হয়ে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর গুলি ছোড়ার তথ্য স্বীকার করেছে। দখলদাররা বলেছে, রাফাতে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য যে রাস্তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল; সেটির বাইরে কিছু মানুষ চলে গিয়েছিলেন। তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে রেডক্রসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের ফিল্ড হাসপাতালে ১৮৪ হতাহতকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯ জনকে হাসপাতালে আসার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। আরও আটজন অল্প কিছুক্ষণ পর সেখানে মারা যান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সহায়তা অফিস জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের খাদ্য ত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে দখলদার ইসরায়েল যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে সেটি যুদ্ধপরাধের শামিল।
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। এতে করে সেখানকার মানুষের মধ্যে খাবার নিয়ে হাহাকার দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ সময় না খেয়ে থাকায় এসব মানুষ খাবারের আশায় জীবনের ঝুঁকিও নিচ্ছেন।
এদিকে গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে তিনজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। নিহতদের সবার বয়স বিশের কোঠায়। সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় এ সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের মার্চে প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়ে হামলা শুরুর পর এটিকেই ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অপরদিকে গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৪৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২টি লাশ হাসপাতালে আনা হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ৫০৩ জন, ফলে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৩ জনে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি হয়েছিল, তা ১৮ মার্চে বাতিল করে ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করে। এরপর থেকে গাজায় বিমান ও স্থলপথে হামলা আরও তীব্র হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ২০১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১২ হাজার ৬৫২ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এ হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। মূলত ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার অধিকাংশ বাসিন্দা এখন অস্থায়ী শিবিরে মানবেতর পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন। অঞ্চলটির অনেক ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এবং বিদ্যুৎ, পানি, ওষুধসহ জরুরি পরিষেবার মারাত্মক সংকট চলছে।