ইয়েমেনের রাজধানী সানার কাছে যৌথ বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনী। এ আক্রমণে তারা হুতি বাহিনীর ড্রোন তৈরির কারখানাকে লক্ষ্যস্থল করেছে বলে দাবি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের।
১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনে হুতিদের বিভিন্ন অবস্থানে ফের হামলা শুরু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত দেশটিতে কয়েকশবার আঘাত হেনেছে, কিন্তু এসব আক্রমণের বিষয়ে তারা খুব অল্প তথ্য প্রকাশ করেছে। অপরদিকে যুক্তরাজ্য গতকাল তাদের হামলার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আলজাজিরা জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সানা থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানে যৌথ আক্রমণে অংশ নেওয়া যুদ্ধ বিমানগুলো। ওই লক্ষ্যস্থলে কয়েকটি ভবন ছিল। ওই ভবনগুলোকে হুতিদের ড্রোন উৎপাদন কারখানা বলে শনাক্ত করেছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। এসব ড্রোন লোহিত সাগরে পশ্চিমা জলযানে হামলা চালাতে ব্যবহার করা হয় বলে দাবি যুক্তরাজ্যের। ব্রিটিশ মন্ত্রণালয়টি বলেছে, অভিযানটি এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয় যেন বেসামরিক হতাহত কমানো যায়। তবে তাদের এ যৌথ হামলায় কতজন হতাহত হয়েছেন তা প্রকাশ করেনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। গত মাসজুড়ে হুতিদের লক্ষ্যস্থলগুলোতে বারবার হামলা চালানো যুক্তরাষ্ট্র এই যৌথ অভিযান নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। মার্চের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুতিরা লোহিত সাগরে চলাচলরত জাহাজগুলোতে হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের ওপর ‘চূড়ান্ত ও প্রবল’ আঘাত হানার জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন। পেন্টাগন জানিয়েছে, তারপর থেকে তারা ইয়েমেনজুড়ে এক হাজারেরও বেশি লক্ষ্যস্থলে আঘাত হেনেছে। এসব হামলায় হুতি যোদ্ধা ও নেতারা নিহত হয়েছেন এবং তাদের সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু এসব হামলায় বেসামরিক হতাহত বাড়ছে, এমন উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে। হুতিদের অনুমোদিত গণমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার ইয়েমেনে আফ্রিকান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি আটক কেন্দ্রে মার্কিন বিমান হামলায় ৬৮ জন নিহত হয়েছেন। আর সানাভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা মওয়াতানা ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মার্কিন হামলাগুলোতে হতাহত হওয়া কয়েকশ বেসামরিকের তালিকা নথিবদ্ধ করেছেন তারা।
এদিকে হুতি আনসারুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রবল হামলার মুখে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী রণতরি ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান অবশেষে লোহিত সাগর থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এক হামলা থেকে বাঁচতে গিয়ে ওই রণতরি থেকে ৬৭ কোটি ডলার মূল্যের একটি যুদ্ধবিমান সাগরে পড়ে যায়। -রয়টার্স
এ ছাড়াও ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষিতর মুখে পড়ার পর মার্কিন বাহিনী পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ইয়েমেনের আল-মাসিরাহ টেলিভিশন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাতে জানায়, ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান রণতরি ও এর সঙ্গে থাকা যুদ্ধজাহাজগুলো শিগগিরই লোহিত সাগর অঞ্চল ত্যাগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইয়েমেনি সূত্রটির দাবি, আমরা ট্রুম্যান রণতরিতে সরাসরি আঘাত হানার খবরটি নাকচ করছি না। আমরা যে কোনো মুহূর্তে এটিকে লোহিত সাগর এলাকা ত্যাগ করতে দেখতে পারি।