গোমতী নদীর পাড়ঘেঁষা বাহেরচর—সবুজে মোড়া শান্ত একটি গ্রাম। কৃষিনির্ভর এ গ্রামের মানুষ এখন শোকে স্তব্ধ। ১৯ দিন পার হলেও কলেজছাত্র তুহিন হত্যার মূল আসামি এখনো ধরা পড়েনি।
পরিবারের অভিযোগ, গত ২০ অক্টোবর পাশের গোবিন্দপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বাবু তার মেয়েকে প্রেমিকের সঙ্গে পালাতে সহযোগিতা করেছেন সন্দেহে বাহেরচর গ্রামের কলেজছাত্র তুহিনকে তুলে নিয়ে দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হলেও বাবুসহ মূল আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
নিহত তুহিন বুড়িচং এরশাদ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ও বাহেরচর গ্রামের গৃহস্থ মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।
তুহিনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার মা ফেরদৌসি বেগম আলমিরা খুলে ছেলের জামা-কাপড় বের করছেন। কখনও গায়ে জড়িয়ে ধরেন, কখনও ঘ্রাণ নেন। কখনও ছেলের কলেজ আইডি কার্ড গলায় পরেন। তার মুখে একটাই কথা—আমার ছেলে তো কিছুই জানত না। ও শুধু নামাজ পড়তে গিয়েছিল, তারপর আর ফেরেনি।
তিনি বলেন, সেদিন রাতে তুহিন বলল, ‘মা, ভাত বাড়াও, আমি নামাজ পড়ে আসি।’ সে আর ফিরে এলো না। বাবু ও তার লোকজন ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে খামারে মেরেছে, আবার রাস্তার পাশে আছাড় মেরেছে। একবার পালাতে চেয়েও পারেনি। শেষে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, পাঁচ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মারা গেল।
ফেরদৌসি বেগমের বলেন—আমার ছেলেকে যেভাবে মেরেছে, সেভাবেই বাবুকে সাজা দেওয়া হোক। ওর ফাঁসি ছাড়া শান্তি পাব না।
বাহেরচর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামবাসী বলছে, মূল আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ন্যায়বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মুফতি আবদুল কাদের বলেন, তুহিন খুব ভদ্র, নামাজি ছেলে ছিল। এভাবে তার মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আক্তার জাহান বলেন, তুহিন আমার ছাত্র ছিল। খুব মেধাবী ও বিনয়ী। তার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই।
এদিকে সাইফুল ইসলাম বাবুর খামারে গেলে দেখা যায়, প্রধান ফটকে তালা। খামারের পাহারাদার ও তার সৎবোন পারভিন আক্তার জানান, আমি শুধু গরুগুলোর দেখাশোনা করি। মানুষ হত্যার ব্যাপারে কিছুই জানি না, ভাই কোথায় তাও জানি না।
বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, মামলাটি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল আসামি সাইফুল ইসলাম বাবুসহ অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। বিষয়টি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ন্যায়বিচারের আশায় এখনও অপেক্ষা করছে তুহিনের পরিবার। প্রতিদিন ছেলের জামা গায়ে জড়িয়ে ঘ্রাণ নেন মা ফেরদৌসি বেগম—যেন সেই পরিচিত গন্ধেই ফিরে পাবেন প্রিয় সন্তানকে।
বিডি-প্রতিদিন/সুজন