প্রতি বছর উদীয়মান সূর্যের দেশে হাজার হাজার মানুষ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছেন। চাকরি, পরিবার, ঘরবাড়ি—সব কিছু ছেড়ে তারা নতুন জীবনের পথে পা বাড়ান, যেন পুরনো পরিচয় মুছে ফেলে অন্য এক অস্তিত্বে জন্ম নিচ্ছেন। এই স্বেচ্ছা অন্তর্ধানকারীদের জাপানে বলা হয় ‘জোহাৎসু’। যার অর্থ—সম্পূর্ণভাবে উবে যাওয়া।
কেন এই পথ বেছে নেন মানুষ? কারণের তালিকা দীর্ঘ—বড় ঋণের চাপ, ব্যর্থ সম্পর্ক, পারিবারিক নির্যাতন, কিংবা সমাজের অদৃশ্য বন্ধন থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। কারও কারও জন্য এটি বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা, আবার কারও কাছে পুরনো জীবনের শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলার সুযোগ।
জাপানে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের ব্যবসা—‘ইয়োনিগেয়া’ বা ‘নাইট মুভার্স’। এই সংস্থাগুলি টাকার বিনিময়ে মানুষকে নিখোঁজ হতে সাহায্য করে। ফোনে যোগাযোগ থেকে শুরু করে গোপন আস্তানা খুঁজে দেওয়া, এমনকি নতুন পরিচয়পত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা—সবই তারা করে দেয়। খরচ পড়তে পারে ২ লক্ষ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, পরিস্থিতি ও ঝুঁকি অনুযায়ী।
নতুন জীবনের ঠিকানা সাধারণত হয় শান্ত, কম জনবসতিপূর্ণ এলাকা। সেখানে ছোটখাটো চাকরি, যেখানে অতীত নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। জাপানে গোপনীয়তার মর্যাদা এত বেশি যে, কোনও অপরাধ বা দুর্ঘটনা না ঘটলে পুলিশও অনুসন্ধানে নামে না। ফলে ‘জোহাৎসু’ হওয়া অনেকের জন্য বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত।
তবে, সবার গল্প সুখের হয় না। কেউ কেউ মুক্তি পান মানসিক চাপ থেকে, আবার অনেকে নতুন জীবনের একাকীত্বে হারিয়ে যান আরও গভীরে।
৯০-এর দশকে অর্থনৈতিক মন্দার সময় থেকেই এই প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু আজও, জাপানের সামাজিক কাঠামো ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার এক অদ্ভুত মিশেলে, ‘জোহাৎসু’ রয়ে গেছে রহস্যময় ও বিতর্কিত এক অধ্যায়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল