প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বড় গুণ তিনি বাস্তবতা অস্বীকার করেন না। সঠিক পরিস্থিতি বুঝতে পারেন এবং জনগণকে সেই তথ্য দিতে কার্পণ্য করেন না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সংকট উত্তরণ করতে চান। ২৯ অক্টোবর তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রথম সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভিতর ও বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে। হঠাৎ আক্রমণ চলে আসতে পারে, এ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে যত ঝড়ঝাপটা আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’ আগামী নির্বাচনের পথে যে নানামুখী বাধা আছে তা ড. ইউনূস কোনোরকম রাখঢাক না করেই বলেছেন। দেশের জনগণকে সতর্ক ও সচেতন করেছেন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে নয়, বরং সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চান। মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর আগে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিশনের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে কর্মপরিকল্পনা কমিশন প্রস্তাব করেছে, সরকার তা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে তার ওপর নির্ভর করছে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। বিশেষ করে কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদ প্রশ্নে গণভোট কখন হবে, সেই সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া যেসব সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারেনি, সেই সুপারিশগুলো সনদে এবং গণভোটে কীভাবে থাকবে, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপিসহ একাধিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দেওয়াকে ষড়যন্ত্র মনে করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা।’ ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলাটে করে ফেলেছে। তাদের রিপোর্ট রাজনৈতিক বিভাজন বাড়িয়ে দিয়েছে। ঐকমত্য কমিশন কৌশলে সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টার ওপর ন্যস্ত করে নিজেরা গা বাঁচিয়েছে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে প্রধান উপদেষ্টার ওপর। শুধু দেশবাসী নয়, গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে শান্তিতে নোবেলজয়ী এই বরেণ্য ব্যক্তির দিকে।
এমন একসময় কমিশন এ সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করল যখন দেশে একটি গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রচ ঝড়ের আগে যেমন সবকিছু থমকে থাকে, বাংলাদেশে এখন সে রকম অবস্থা বিরাজ করছে। শেষবেলায় উপদেষ্টাদের অনেকেই নানান বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি শেষ করার আগেই অনেকে ব্যস্ত নিরাপদ প্রস্থানের পথ খুঁজতে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাড়ছে বিভেদ আর অনৈক্য। আমলাতন্ত্রে চলছে অস্থিরতা। পুলিশবাহিনী এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স ছাড়া কোনো সুখবর নেই। শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে হতাশা। ব্যবসাবাণিজ্য প্রায় বন্ধ। নতুন কর্মসংস্থান নেই, উপরন্তু নতুন বেকার হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। সমাজজুড়ে উচ্ছৃঙ্খলতা। মবসন্ত্রাসে অতিষ্ঠ জনজীবন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন লেখাপড়ার চেয়ে বেশি হচ্ছে সহিংসতা। প্রতিদিন কোনো না কোনো শিক্ষাঙ্গনে ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সর্বশেষ দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে সহিংসতায় জড়াল, তা গোটা জাতিকে হতবাক করেছে। ঢাকার আশুলিয়ায় বেসরকারি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সামান্য ঘটনা কেন্দ্র করে এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ প্রমাণ করে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তরুণরা।
চারপাশে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশ নির্বাচনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। কিন্তু এ পথ যে দুর্গম অরণ্য পাড়ি দেওয়ার মতোই কঠিন, তা সবাই বুঝতে পারছেন। এ দেশের মানুষ খুব ভালো করেই জানে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া এ অনিশ্চয়তা কাটবে না। এ অশান্তি দূর হবে না। জনজীবনে স্বস্তি ফিরবে না। দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে না। এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে দেশকে স্বাভাবিক ছন্দে নিয়ে আসতে পারে কেবল একটি নির্বাচিত সরকার। কিন্তু আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে তৎপর বিভিন্ন গোষ্ঠী। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে দেশ অস্থিতিশীল করতে যেন তৎপর নানান মহল। এ ষড়যন্ত্র, অদক্ষতা এবং অযোগ্যতার বিরুদ্ধে দেশকে নির্বাচনের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন একজন। তিনি জানেন দেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ নির্বাচন। তিনি সব প্রতিকূলতা আর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নীরব লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ধীরস্থিরভাবে, অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় চারপাশের প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের প্রশ্নে অবিচল তিনি। তিনি আছেন জন্যই দেশবাসী এখনো আশাবাদী। বেশির ভাগ মানুষই বিশ্বাস করে, তিনি যতক্ষণ বাংলাদেশের কান্ডারি ততক্ষণ বাংলাদেশ সব বাধা অতিক্রম করে নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত বন্দরে নোঙর করবেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ড. ইউনূসের দিকে। তিনি তাঁর সারা জীবনের মেধা আর অভিজ্ঞতা নিংড়ে দিয়ে গণতন্ত্রের পথে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
২৭ অক্টোবর একটি সম্মেলনে সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল প্রধান উপদেষ্টার। সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমানের আমন্ত্রণে রিয়াদে ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততার কারণেই এ সফর বাতিল করেন। এ সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যায়, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লক্ষ্যে কতটা অবিচল।
এ মুহূর্তে দেশে যে একটি নীরব সংকট চলছে তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। নির্বাচনের আগে উপদেষ্টাদের নিয়ে নানান বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত তিনটি দলই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কয়েকজন উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে তিন দল পৃথকভাবে যেসব উপদেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তার তালিকা একসঙ্গে করলে ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’ অবস্থা হবে। দেশকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে উপদেষ্টাদের দায়িত্ব অনেক। কিন্তু কোনো কোনো উপদেষ্টা এ দায়িত্ব পালনের চেয়ে নিরাপদ প্রস্থানপথ খুঁজতেই যেন বেশি ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার সৃষ্টি করছেন অযাচিত বিতর্ক। এই যেমন ‘নভেম্বরেই ক্যাবিনেট ক্লোজ হয়ে যাবে’, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের এমন বক্তব্য গোটা জাতিকে যুগপৎ হতবাক এবং উদ্বিগ্ন করে তোলে। ক্যাবিনেট ক্লোজ হলে দেশ কে চালাবে? দেশে তো গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। এমন নানান প্রশ্ন সামনে আসে জনগণের। দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে হয় প্রধান উপদেষ্টাকে। জনগণকে আশ্বস্ত করতে তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য নাকচ করে বিবৃতি দিতে হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে। বিভ্রান্তি এড়াতে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবে। যার অর্থ নভেম্বরের পরও উপদেষ্টা পরিষদের সভা এখনকার মতোই চলবে, সংস্কারকাজও থেমে থাকবে না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে মাহফুজ আলম বক্তব্য দেওয়ার এক দিন পর সোমবার অন্তর্র্বর্তী সরকারের বিবৃতি আসে। সরকার ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। সেই নির্বাচনের আগে এ সরকারকে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর আদল দেওয়ার দাবি বিএনপি ইতোমধ্যে তুলেছে। তার মধ্যেই ডিআরইউর অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য হাতে সময় কম থাকার কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘আমাদের যে সময়সীমা আছে, তখন তো ছিল তিন মাস। এখন তো আর হয়তো এক মাস আছে। কারণ এই যে জিনিসগুলো করা হবে, সেটা ক্যাবিনেটেই করতে হবে। অথবা নীতিমালা বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে করতে হবে। সেটা আমরা নভেম্বরের পরে আর করতে পারব না। কারণ নভেম্বরেই ক্যাবিনেট ক্লোজ হয়ে যাবে, ক্যাবিনেট মিটিংটা। এরপর নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আর সম্ভবত ক্যাবিনেট মিটিং বসে না।’
উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম নিয়ে মাহফুজ আলমের কিছু মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে জানিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বস্তুত সরকারের গৃহীত সংস্কার ও নীতিমালা প্রণয়নের কাজ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে এটা সঠিক নয়, বরং সংস্কার কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে চলমান থাকবে।’ উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রমও চলতে থাকবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না করা পর্যন্ত নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাবে এবং উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকও নিয়মিত অনুষ্ঠিত হবে।’
এ রকম ঘরে-বাইরে বৈরিতা সামাল দিতে হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। সরকারের ভিতরে থাকা কিছু ব্যক্তির দায়িত্বহীন আচরণের কারণে সরকারকে এ রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। এসব সামাল দিয়েই দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ড. ইউনূস।
নির্বাচনের পথে প্রধান উপদেষ্টার সামনে এখন তিনটি চ্যালেঞ্জ। প্রথমত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সব দলকে একটি ঐক্যের বিন্দুতে নিয়ে আসা। জুলাই সনদে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান করা। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যেন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। দ্বিতীয়ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। যেন মানুষ নিশ্চিন্তে এবং নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে। তৃতীয়ত নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও বিতর্কমুক্ত রাখা। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জুলাই বিপ্লব ‘ব্যর্থ’ হবে। দেশে একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানেন সীমিত শক্তি দিয়ে তাঁকে এক কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ড. ইউনূস আছেন জন্যই আমরা আশাবাদী। তিনি দীর্ঘ জীবনে যা অর্জন করেছেন তার সবটাই অসম্ভবকে সম্ভব করেই। এবার তিনি জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিচ্ছেন। এ পরীক্ষায় তাঁর সাফল্যের কোনো বিকল্প নেই। তাঁর সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে, শান্তিতে নোবেলজয়ীর দিকে।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        