মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠাতে হলে ১০টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে ন্যূনতম পাঁচ বছর সন্তোষজনক কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং বিগত পাঁচ বছরে বিদেশে কমপক্ষে তিন হাজার কর্মী পাঠানোর প্রমাণ থাকতে হবে।
সম্প্রতি এ ধরনের শর্ত জুড়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির দেওয়া এ শর্ত পূরণ করা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করার আহ্বান জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
তবে মালয়েশিয়ার দেওয়া শর্ত পূরণ করা মানে আবারও সিন্ডিকেটের কবলে এই শ্রমবাজার যাচ্ছে বলে মনে করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাঁদের মতে, যে সিন্ডিকেটের পকেটে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ছিল, এই শর্ত পূরণ করতে হলে সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। ফলে এবারও সেই সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। একাধিকবার বৈঠক করেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার চালু করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। বাজারটি চালু হওয়ার পর আবার যাতে সিন্ডিকেটের দখলে না গিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত হয়, তা নিয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে বাংলাদেশ সরকার। প্রথমদিকে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে নজর দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। তবে সবার জন্য উন্মুক্ত না করলেও যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে চায়, তাদের জন্য ১০টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার।
আর এসব শর্ত পূরণ করতে গেলেই শ্রমবাজারটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়বে বলে মনে করছেন রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারটি আবারও সিন্ডিকেটের কবলে যাবে। সিন্ডিকেট চক্রই এই কাজটা করছে। কারণ কর্মী পাঠানোর জন্য একটা ১০ হাজার স্কয়ার ফিটের অফিসের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। পৃথিবীর যেকোনো দেশে আমরা এত লাখ লাখ লোক পাঠাই, কোথাও এ রকম রিকোয়ারমেন্ট নেই।
আর সরকার এটা আমাদের চাপিয়ে দিতে পারে না। এটার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটাতে কর্মীদের খরচ বাড়বে। আগের সিন্ডিকেটই এই কাজ করছে। আগে ইলিগালি করত। এখন লিগালি করার একটা অপচেষ্টা।’
মালয়েশিয়ার দেওয়া ১০ শর্ত
শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—লাইসেন্স পাওয়ার পর ন্যূনতম পাঁচ বছর সন্তোষজনক কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিগত পাঁচ বছরে বিদেশে অন্তত তিন হাজার কর্মী পাঠানোর প্রমাণক থাকতে হবে। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্য দেশে কর্মী পাঠানো ও কর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন, নিয়োগ এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের বিষয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রিক্রুটিং এজেন্সির অনুকূলে বৈধ লাইসেন্স থাকতে হবে। কর্মী প্রেরণকারী দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রিক্রুটিং এজেন্সির অনুকূলে সদাচরণের সনদ থাকতে হবে। এজেন্সির বিরুদ্ধে জবরদস্তিমূলকভাবে শ্রমে নিয়োগ, মানবপাচার, শ্রম আইন লঙ্ঘন, জোরপূর্বক অর্থ আদায়, অর্থপাচার বা অন্য কোনো আর্থিক অপরাধ এবং অনৈতিক অভিবাসন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার রেকর্ড থাকা যাবে না। সামগ্রিক সুবিধাসহ রিক্রুটিং এজেন্সির নিজস্ব প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন কেন্দ্র থাকতে হবে। এজেন্সির অনুকূলে পৃথক পাঁচজন আন্তর্জাতিক নিয়োগকর্তার দেওয়া সন্তোষজনকভাবে অভিবাসন কার্যক্রম সম্পাদনের প্রশংসাপত্র থাকতে হবে। রিক্রুটিং এজেন্সির অবশ্যই কমপক্ষে তিন বছর ধরে পরিচালিত অন্তত ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি স্থায়ী অফিস থাকবে। রিক্রুটিং এজেন্সির অবশ্যই বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে গন্তব্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার শর্তাবলি আইনসম্মত ও পদ্ধতিগতভাবে অনুসরণ করার প্রমাণক থাকতে হবে।
এ বিষয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আগে বাংলাদেশের তুলনায় অন্য দেশের বেশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে সুযোগ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার অন্যান্য কর্মী পাঠানো দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও সমতা রক্ষা করে বাংলাদেশি বৈধ লাইসেন্সধারী সব রিক্রুটিং এজেন্টকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।
গত ২১-২২ মে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ঢাকায় তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদল অন্য দেশের মতো একই সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্ট নির্বাচনের মানদণ্ড নির্ধারণ এবং তা বাংলাদেশকে অবহিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর তাদের কাছ থেকে পত্রে নিম্নরূপ (১০ শর্ত) রিক্রুটিং এজেন্ট সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া পাওয়া গেছে। আগামীতে অভিন্নভাবে এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও মায়ানমারের রিক্রুটিং এজেন্ট ঠিক করা হবে বলেও জানা গেছে।
দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খুলতে সময় লেগেছিল তিন বছর। ২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবার বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী সর্বশেষ কর্মী গেছে গত বছরের ৩১ মে। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রায় ১৭ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। তাঁদের মধ্য থেকে সাত হাজার ৮২৩ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে মালয়েশিয়ার সরকার। এরই মধ্যে তাঁদের সে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে নতুন কর্মী নিয়োগ এখনো বন্ধ আছে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বিডি প্রতিদিন/নাজিম
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        