বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আগামী দিনে দেশে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে। সেই স্বৈরাচার থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। বিএনপির প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের দেশ গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটাই হোক আমাদের আগামী দিনের প্রতিজ্ঞা। এটাই হোক আমাদের শপথ।’ তিনি বলেন, ‘জনগণই হচ্ছে সব ক্ষমতার উৎস। তাই জনগণকে আমাদের সঙ্গে রাখতে হবে। জনগণ যেভাবে চায় আমাদের ঠিক সেভাবেই চলতে হবে। জনগণের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য-সবার আগে বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ সেখানেই জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।’
গতকাল বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা মহানগরী বিএনপি সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু প্রমুখ বক্তব্য দেন। ২ সহস্রাধিক কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও দলের অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এবং সমর্থক এতে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনকে সভাপতি ও সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বক্তব্য অনেক হয়েছে। এখন আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আজ আমাদের একটি শপথ নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দেশ গড়তে হবে। দেশের সব গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক সমমনা দলকে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘গত ১৬ বছর আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আমাদের নেতা-কর্মীরা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। বহু নেতা-কর্মীকে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে দেশ পুনর্গঠন। দেশ যদি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুনর্গঠন করতে হয়, তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ আপনারা ঐক্যবদ্ধ আছেন বলেই এত সুন্দর একটি সম্মেলন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি।
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশটি হচ্ছে আপনার আমার সবার ঘর। এ ঘরে ডাকাত পড়েছিল গত ১৬ বছর। এ দেশ গঠন করতে হবে। দেশ গঠনে আসল শক্তি জনগণ। তাই জনগণের কাছে আমাদের যেতে হবে। দুই-তিন জনের টিম গঠন করে জনগণের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। সবার কাছে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে হবে। আমরা কীভাবে দেশ গঠন করব, কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলব, কীভাবে শান্তিশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করব, কীভাবে উন্নয়ন করব সে বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের একটি লক্ষ্য হবে ঐক্যবদ্ধ জনগণ এবং জনগণকে নিয়ে দেশ গঠন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই-আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের গণতন্ত্রমনা সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এমন একটি প্রত্যাশিত দিন দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। ১৬ বছর পর এমন একটি দিন পেলাম। আমরা সুখের দিনে অতীত ভুলে যাই। আমরা যেন বিস্মৃত না হই। এ দেশ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়েছে, সে টাকা দিয়ে ৪০টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। ব্যাংকিং খাতে ৫ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণে জর্জরিত। এ আওয়ামী লীগের ইতিহাস লুটপাটের ইতিহাস। জুলাই অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে। ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে। এ বিষয়টি আমরা যেন ভুলে না যাই।’
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘যারা একাত্তর অস্বীকার করে, যারা মুক্তিযুদ্ধ স্বীকার করে না তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ পিআর কাকে বলে চেনে না, জানে না। আপনি ভোট দেবেন একজনকে, কিন্তু আপনার প্রতিনিধি হবে অন্যজন। ভোট কেবল মার্কাই নয়, ভোট নেতার সঙ্গে ভোটারের একটি আত্মার বন্ধন।’
২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এতে বেগম রাবেয়া চৌধুরী সভাপতি, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন সাধারণ সম্পাদক ও মো. মোস্তাক মিয়া সাংগঠনিক সম্পাদক হন। দক্ষিণ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের ১০ উপজেলা, চার পৌরসভা, ১০৭ ইউনিয়ন, ৯৯৯ ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়। এতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।