ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য তথ্য সংগ্রহে মাঠ কর্মকর্তাদের আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি ইতোমধ্যে সব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেল প্রস্তুত করতে হবে।
এজন্য সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শ্রেণি বা গ্রেডভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। বহুল প্রত্যাশিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপে ফেব্রুয়ারির ভোটের তারিখ ও ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার তারিখ না থাকলেও ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার আভাস রয়েছে। আর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট ধরে সাজানো হয়েছে পরিকল্পনা।
এতে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের সংলাপ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনি আইন বিধি সংস্কার, দল নিবন্ধন, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, ভোট কেন্দ্র স্থাপন, পোস্টাল ভোটিং, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনসহ দুই ডজন কাজের সময়সূচি। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সবকিছুকেই চ্যালেঞ্জ মনে করছে নির্বাচন কমিশন।
একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোট, আরপিও মন্ত্রণালয়ে : কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে ‘না’ ভোটের বিধান রাখাসহ একগুচ্ছ সংশোধনী এনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ চূড়ান্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ চূড়ান্ত করতে ভেটিংয়ের জন্য গতকাল সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
এর আগে গত ১১ আগস্ট ইসির নবম সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইভিএম সংক্রান্ত যাবতীয় বিধি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ‘না’ ভোটের বিধান করা হয়েছে।
‘না’ ভোটের বিধানটা হবে যদি কোথাও একজন প্রার্থী হয়, তাহলে তিনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হবেন না। সার্বিকভাবে ‘না’ ভোট নয়। যদি কোনো আসনে মাত্র একজন প্রার্থী হন, তাকেও নির্বাচনে যেতে হবে। তার বিপক্ষে ‘না’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখানে যদি ‘না’ বিজিত হয়, তাহলে দ্বিতীয় ধাপে আর ভোট হবে না। তখন ব্যক্তি প্রার্থী নির্বাচিত বলে বিবেচিত হবে।
সানাউল্লাহ আরও বলেন, আরপিওতে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ও বাতিল নিয়ে যে বিধানগুলো ছিল, যেখানে পুরো আসনে নির্বাচন বাতিল বা ফলাফল বাতিল করার যে সক্ষমতা, সেটাকে সীমিত করা হয়েছিল। সেটা আবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে, অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন অবস্থা বুঝে নির্বাচন স্থগিত করা, এক বা একাধিক বা সব আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে।
আরপিওতে আরও যে উল্লেখযোগ্য বিধান আনা হয়েছে- সরকার ও ইসির মধ্যে মতবিরোধ হলে প্রাধান্য পাবে ইসির চাহিদা; তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগেই প্রশাসন ও পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইসির অধীনে যাবে; সরকারি কর্মকর্তারা নির্দেশনা না মানলে গোপনীয় অনুবেদন ও শাস্তির ব্যবস্থা নেবে ইসি। এ ছাড়া সমভোট হলে লটারি প্রথা বিলোপ করে পুনঃভোট, নির্বাচনি ব্যয় তদারকিতে কমিটি গঠন, দলের নির্বাচনি ব্যয় ও আয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ, প্রতীক বরাদ্দের আগেই যেন মামলার নিষ্পত্তি, হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে ভোটের পরও ব্যবস্থা, মিথ্যা অভিযোগ দিলে মামলাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব এতে রয়েছে।