রাজধানীর আদাবরে জিম্মি করে রাখা যুবককে উদ্ধারে গেলে পুলিশসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। গুরুতর অবস্থায় পুলিশ সদস্য আল আমিনকে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে এই ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ১০২ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশকে কোপানোর সঙ্গে জড়িত বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। বাকি ৯৭ জনকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ডিএমপির আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, সোমবার রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-থেকে কল আসে, আদাবর থানাধীন সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় গন্ডগোল হচ্ছে। থানার ডিউটি অফিসার হাউজিং এলাকার টহল টিমকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। তখন টহল টিম সেখানকার একটি গ্যারেজে গিয়ে দুইপক্ষের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা চালক আল আমিনকে একা পেয়ে কবজি কাটা গ্রুপের সদস্যরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পাওয়া ওই পুলিশ কনস্টেবল হৃদরোগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সূত্র বলছে, পুলিশকে কোপানোর সঙ্গে জড়িত কবজি কাটা গ্রুপের সদস্যরা। অনেককে আটক করতে পারলেও এই গ্রুপের দলনেতা জনি, রনি ও সোহেল ওরফে মাওরা সোহেলকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। আদাবর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাকারিয়া বলেন, সোমবার রাতে এ ঘটনার পরপরই যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে কিশোর গ্যাংয়ের ১০২ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টা ৫১ মিনিটে একটি নির্মাণাধীন বাড়ির টিনশেড গেইটের সামনে ২০-২৫ জন সশস্ত্র কিশোর গ্যাং সদস্য জড়ো হয়। এ সময় তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল কবজি কাটা গ্রুপের সদস্য জনি ও রনি। কিশোর গ্যাং সদস্যরা এক মিনিট পর বাড়ির গেইট ভেঙে ভিতরে ঢুকে কাউকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর তারা চলে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া এ ঘটনাটি মূলত পুলিশ সদস্যদের কুপিয়ে আহত করার কিছুক্ষণ আগের। তারা এ সড়ক দিয়ে গণছিনতাই করতে করতে পুরো আদাবর এলাকায় মহড়া দেয়। ওই সময় নির্মাণাধীন বাড়ির গেইট ভেঙে ভিতরে ঢুকে চাঁদা দাবি করছিল। না দেওয়ায় জনি ও রনি বাড়ির কেয়ারটেকারসহ যারা ছিল, তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। পুলিশের ওপর হামলায় নাজির, ওসমান, দাঁতভাঙ্গা সুজন, কব্জি কাটা হৃদয় ও গাঁজা ব্যবসায়ী রাজুসহ অনেকে জড়িত ছিল।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মোহাম্মদপুর-আদাবর ভয়ংকর কিশোর গ্যাং ‘কবজি কাটা’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য জনি ও রনি। তারা আদাবর-১০ এলাকায় বালুর মাঠে বসে পুরো আদাবর এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। কবজি কাটা আনোয়ার জেলহাজতে থাকায় তার হয়ে এলাকায় এ দুই কিশোর গ্যাং ত্রাস সৃষ্টি করে। এর আগেও বেশ কয়েকবার বহু মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা।