রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধকারী জুলাই যোদ্ধাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় অবরোধকারীদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের মঞ্চটিও অপসারণ করা হয়। এর আগে গতকাল বিকালে জুলাই যোদ্ধাদের আরেকটি পক্ষ শাহবাগে এসে অবরোধের বিরোধিতা শুরু করলে তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় সংঘাত এড়াতে পুলিশ উভয় পক্ষকে শাহবাগ মোড় থেকে লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। তবে শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে জুলাইয়ের আহত যারা চিকিৎসা নিচ্ছে তারা জনভোগান্তির কথা বলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এখানে পুলিশ কোনো অ্যাকশন নেয়নি।
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের একটি দল পিজি হাসপাতাল থেকে এসে শাহবাগ অবরোধকারীদের ওপর চড়াও হয়। অবরোধকারীদের একজন আবদুর রহমান বলেন, আমরা সন্ধ্যার পর রাস্তা ছেড়ে দিয়ে শুধু অবস্থান কার্যক্রম চালিয়ে যেতাম। কিন্তু কিছু না বলে তারা হামলা করে আমাদের ওপর। আমাদের জুলাই আহত এক বোনের হাত ভেঙে গেছে তাদের লাঠির আঘাতে। আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা সৌরভ বলেন, আমাদের ওপর পুলিশ ও জুলাই আহতদের আরেকটি দল একসঙ্গে হামলা করেছে। আমাদের দুজন এখন হাসপাতালে ভর্তি। অনেকে আহত। আমরা রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হচ্ছি এখন। পরবর্তীতে আমাদের কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা’ ব্যানারে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এ সময় তারা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে’সহ নানা স্লোগান দেয়। এতে রাজধানীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। অবরোধ অব্যাহত থাকায় নগরবাসী ও যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। আন্দোলন শুরুর ৩২ ঘণ্টা পর শাহবাগ মোড় অবরোধ মুক্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকালে জুলাই যোদ্ধাদের আরেকটি পক্ষ শাহবাগে এসে অবরোধকারীদের ভুয়া আখ্যা দেয়। তাদের দাবি তারাই ‘প্রকৃত’ জুলাই যোদ্ধা। এ সময় তারা বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার তারিখ জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে শাহবাগের মতো ব্যস্ত রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। এর ফলে জুলাই নিয়ে মানুষের কাছে আরও ক্ষোভ জন্মাচ্ছে। তাদের গতকালও আমরা বলেছি। তারা আমাদের কথা রাখেনি। এ সময় জুলাই-আহত কার্ড বের করে দেখাতে দেখা যায় তাকে। আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে ছিল- ‘জুলাই শহীদ’ ও ‘জুলাই যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের নিশ্চয়তা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান, কল্যাণ খরচ রাষ্ট্রের বহন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দমন-পীড়নের বিচার, একটি স্বাধীন ও কার্যকর সত্য-ন্যায় কমিশন গঠন, শহীদ ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনগত সুরক্ষা ও সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে জুলাই সনদের দাবিতে জুলাই যোদ্ধারা শাহবাগ অবরোধ করে রেখেছিলেন। বিভিন্ন হাসপাতালে জুলাইয়ের আহত যারা চিকিৎসা নিচ্ছে তারা জনভোগান্তির কথা বলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এখানে পুলিশ কোনো অ্যাকশন নেয়নি।