সাহিত্য ও শিক্ষাঙ্গনের মানুষকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বিকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী সানজিদা ইসলাম, একমাত্র পুত্র সাফাকাত ইসলামসহ অগণিত ছাত্র, ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী, বন্ধুসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লাশ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। জাতীয় কবিতা পরিষদের আয়োজনে সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হবে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা শেষে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। এর আগে ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ৩ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রাতেই তার হার্টে অস্ত্রোপচার করে দুটি রিং পরানো হয়।
এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৫ অক্টোবর তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।
তিনি ১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আমীরুল ইসলাম এবং মাতা রাবেয়া খাতুন। তিনি সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৮ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ৭২ সালে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৮১ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়েটসের কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব বিষয়ে পিএইচডি করেন। পেশাগত জীবনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। সেখান থেকে অবসরের পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যোগ দেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থগুলো হলো- স্বনির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯৪), থাকা না থাকার গল্প (১৯৯৫), কাঁচ ভাঙা রাতের গল্প (১৯৯৮), অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প (২০০১), প্রেম ও প্রার্থনার গল্প (২০০৫), সুখদুঃখের গল্প, বেলা অবেলার গল্প ইত্যাদি।
উপন্যাসগুলো হলো- আধখানা মানুষ্য (২০০৬) দিনরাত্রিগুলি, আজগুবি রাত, তিন পর্বের জীবন, যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক, ব্রাত্য রাইসু সহযোগে, কানাগলির মানুষেরা ইত্যাদি। প্রবন্ধ ও গবেষণাগ্রন্থগুলো হলো-
নন্দনতত্ত্ব (১৯৮৬), কতিপয় প্রবন্ধ (১৯৯২)। অলস দিনের হাওয়া, মোহাম্মদ কিবরিয়া, সুবীর চৌধুরীর সহযোগে, রবীন্দ্রনাথের জ্যামিতি ও অন্যান্য শিল্পপ্রসঙ্গ ইত্যাদি।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমানের ওপর তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম রয়েছে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৮ সালে একুশে পদক পেয়েছেন।