রাজস্ব খাতসহ অর্থনীতিতে সংস্কার করতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়বে বাংলাদেশ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ প্রকল্পের তৃতীয় এবং চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড় অনুমোদন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল অনলাইনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আইএমএফের বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপা জর্জিও, ডেপুটি মিশন প্রধান ইভো ক্রিজনার এবং প্রতিনিধি জয়েন্দ্র ডে।
মিশন প্রধান ক্রিস পাপা জর্জিও বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়েও ঝুঁকি রয়েছে। আইএমএফের এক্সিকিউটিভ বোর্ড ২৩ জুন ইসিএফ-ইএফএফ-আরএসএফ ব্যবস্থার সম্মিলিত তৃতীয় এবং চতুর্থ কিস্তি পর্যালোচনা সম্পন্ন করেছে এবং এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে মোট ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়ের অনুমোদন করেছে। আইএমএফ বোর্ড এই ঋণ কর্মসূচির সম্প্রসারণ এবং বর্ধন অনুমোদন করেছে। প্রোগ্রামটি এখন ২০২৭ সালের জুন মাসে শেষ হবে এবং বাকি সময়কালে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত অর্থায়ন করা হবে বাংলাদেশকে।
তিনি বলেন, নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নেওয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো স্বাগত জানায় আইএমএফ, তবে, বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য এই বৃহত্তর বিনিময় হারের নমনীয়তা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর রাজস্ব বৃদ্ধি এবং সরকারি ব্যয়কে যুক্তিসংগত করার প্রচেষ্টা, যার মধ্যে ভর্তুকি হ্রাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, একটি প্রয়োজনীয় আর্থিক স্থান তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক খাতের নীতিমালায় স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সুসংগত কৌশল তৈরি করা প্রয়োজন। এর পরে নতুন আইনি সংস্কারের দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত, যাতে ছোট আমানতকারীদের সুরক্ষার পাশাপাশি সুশৃঙ্খল ব্যাংক পুনর্গঠন সম্ভব হয়। টেকসই কাঠামোগত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, শাসনব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং তথ্যের মান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। উচ্চ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য জলবায়ু অর্থায়নকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এতে আরও জানানো হয়, কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং পরিবেশেও অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এ ছাড়া বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানায় আইএমএফ। আইএমএফ জানায়, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে বাংলাদেশে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এজন্য সঠিক, নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পরিসংখ্যান জোগান দিতে হবে।