যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ দেখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসে নতুন করে আরও ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিন সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন। ফলে এই মুহূর্তে শহরটিতে প্রায় ৪ হাজার গার্ড ও প্রায় এক হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু এখনো বিক্ষোভ পুরোপুরি থামেনি। -রয়টার্স
শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলির প্যারামাউন্ট এলাকায় নথিবিহীন অভিবাসীদের আটক করতে অভিযান চালায় মার্কিন পুলিশ এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিই। এই অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই শহরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অভিবাসনবিরোধী অভিযান শুরু হয় এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় এর প্রভাব সবচেয়ে তীব্র হয়ে ওঠে। প্রথম অভিযানের সময়ই প্যারামাউন্ট এলাকায় পুলিশের মুখোমুখি হন স্থানীয়রা। অভিবাসনপ্রত্যাশী ও মানবাধিকার সমর্থকরা মিলে বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, বোতল ও মলোটভ ককটেল ছুড়ে মারেন তারা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে প্রথম ধাপে ন্যাশনাল গার্ডের দুই হাজার সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়।
লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ এখন চতুর্থ দিনে পৌঁছেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলছে। তবে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভবনে আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের কয়েকটি গাড়িতে আগুন এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া ও সান ফ্রান্সিসকোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও বিক্ষোভ চলাকালীন বেশি সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য সংখ্যা প্রকাশ পায়নি।
৪২ বছর বয়সি মারজিতা কেরেটা, যিনি একজন প্রথম প্রজন্মের মার্কিন নাগরিক এবং যার মা মেক্সিকো ও বাবা হন্ডুরাস থেকে এসেছেন, বলেন, ‘এখানে যা হচ্ছে, তার প্রভাব সব মার্কিনির ওপর পড়ছে। কারণ এদেশের বেশির ভাগ মানুষ মুক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চায়।’
উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ও বহুজাতিক জনগোষ্ঠীর অঙ্গরাজ্য। এখানে বহু সংখ্যক নথিবিহীন অভিবাসী, বিশেষ করে মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে আগত মানুষ বসবাস করেন। তাদের অনেকেই শহরতলির এলাকায় কাজ করে জীবিকানির্বাহ করেন। এই অবস্থায় অভিযান ও সেনা মোতায়েন নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সেনা মোতায়েনের অভিযোগে মামলা করেছে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য প্রশাসন। সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘বেআইনিভাবে’ জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ঘটনায় এ মামলা করা হয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন, তা তার ফেডারেল ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে এবং এটি মার্কিন সংবিধানের দশম সংশোধনীর সরাসরি লঙ্ঘন। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ট্রাম্প তার প্রতিরক্ষা সচিব এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের ‘অবৈধ’ পদক্ষেপ থেকে রাজ্যকে রক্ষা করতেই ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর এই মামলাটি করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা বলেন, ‘ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ক্যালিফোর্নিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি। আমরা আদালতের কাছে এই সেনা মোতায়েনকে বেআইনি ঘোষণা করার আহ্বান জানাব এবং ভবিষ্যতে বিক্ষোভ দমনে এ ধরনের মোতায়েনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাইব।’ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রব বন্টা আরও বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডকে অবৈধভাবে ব্যবহারের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’ গত চার দিন ধরে লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প বিক্ষোভ দমন করতে ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের মোতায়েনের নির্দেশ দেন।
ট্রাম্পের নির্দেশনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য প্রশাসন তার বিরুদ্ধে মামলা করে। গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘এটি একজন স্বৈরাচারীর কাজ, একজন গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্টের নয়।’ অন্যদিকে ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের ‘বিদ্রোহী ও সহিংস জনতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের তিনি প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।