মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য মানবিক করিডর স্থাপনের কথা ‘গুজব এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। তিনি বলেছেন, করিডর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি, হবেও না।
তবে সেখানে ত্রাণ পৌঁছাতে জাতিসংঘ একটা ক্রস বর্ডার চ্যানেলের কথা বলেছে। সেটা করতে গেলে কিছু নিয়ম-কানুন আছে। সব অংশীজন একমত হলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ে বা স্বার্থপরিপন্থি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, করিডরের বিষয়টা বুঝতে হবে। এটা হচ্ছে একটা ইমার্জেন্সি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা। আমরা এখানে কাউকে সরাচ্ছি না। যেহেতু অন্য কোনো রুট দিয়ে আরাকানে সাহায্য-সহযোগিতা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না, তাই জাতিসংঘ আমাদের কাছে একটা ক্রস বর্ডার চ্যানেলের কথা বলেছে, যাতে ত্রাণগুলো ওপারে নিয়ে যেতে পারে। আরাকানের যে অবস্থা তাতে করিডরের কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, করিডরের প্রচারণা প্রতিবেশী দেশের একটি মিডিয়া থেকে এসেছে। এমনকি তারা প্রচার করছে যে আমরা আমেরিকার পক্ষ থেকে প্রক্সি যুদ্ধ করব। এগুলো সব অবাস্তব ও মিথ্যা। প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক এই হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, আরাকানে এখনো যুদ্ধাবস্থা চলছে। ইউএনডিপির রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে- এই পরিস্থিতিতে আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। ইতোমধ্যেই মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝায় পরিণত হয়েছে। আর কাউকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো জরুরি। আমাদের ধারণা এ কাজটি করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারব। যতদিন আরাকান অস্থিতিশীল থাকবে, আমরা প্রত্যাবাসনের কথা বলতেই পারব না। খলিলুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত যেতেই হবে। আমরা চাই টেকসই প্রত্যাবাসন, যাতে আবার ফেরত না আসে। আরাকানের ৯০ ভাগ এলাকা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। আমরা আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সমান্তরালে আলোচনা করছি। আমাদের আরাকান আর্মি স্পষ্টভাবে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া তাদের একটা প্রিন্সিপাল পজিশন। একই কথা মিয়ানমার সরকারও বলেছে। আরাকান আর্মি বলেছে পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরতের উদ্যোগ নেবে। তিনি বলেন, মানবিক চ্যানেলের বিষয়টা দেশের সব অংশীদারকে নিয়ে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া এখানে যারা সহায়তা দেবে, যারা গ্রহণ করবে সবাইকে কিছু শর্ত মানতে হবে। আরাকান আর্মি যদি ‘এথনিক ক্লিনজিং’- এর পলিসি নেয়, বা মিয়ানমার আর্মি এয়ার স্ট্রাইক বন্ধ না করে, তাহলে কিছুই করা সম্ভব হবে না।
এ সময় করিডর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য টেনে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা করিডর শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন, সেটা ছিল স্লিপ অব টাং। পরে উনি সংশোধন করেছিলেন। রাখাইনে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পরে ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে- এই প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, পুরো কন্ট্রোল থাকবে জাতিসংঘের। আমাদের দায়িত্ব সীমান্ত পর্যন্ত, সেখানে মাদক পাচার হচ্ছে কি না, অন্য কিছু হচ্ছে কি না, সেটা আমরা দেখব। দুই পক্ষ সম্মত হলে, পরিস্থিতি শান্ত হলেই শুধু আমরা যাব। করিডর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ নিয়ে কোনো ফাঁকফোকর নেই। করিডর দেওয়ার বিষয়ে বিদেশিদের চাপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ওপর কারও চাপ নেই। যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ যারাই আছেন অংশীজন, আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি। তাড়াহুড়ার কোনো কথা নেই। হিসাব আমাদের সোজা, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত যেতে হবে এবং ফেরত গিয়ে আবার যেন চলে না আসে। টেকসই প্রত্যাবাসন হতে হবে।
নিজের নাগরিকত্বের প্রসঙ্গে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, আমার একটাই সিটিজেনশিপ, বাংলাদেশি। বাংলাদেশ ছাড়া আমার অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট নেই। আমি জাস্ট আমেরিকায় ছিলাম। আরেক দেশে অবস্থান করার কারণে সে দেশের নাগরিকত্বের কথা বললে তো তারেক জিয়ার ওপরও প্রশ্ন চলে আসবে।