ভারী বর্ষণজনিত কারণে দেশের বেশ কিছু স্থানে নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে তলিয়ে যাচ্ছে নিচু এলাকা। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতাও তৈরি হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিলেট : উজানে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় সিলেটের প্রায় সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, ধলাই, মনু, সারিগোয়াইন ও যাদুকাটা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি আরও বেড়েছে। তবে এখনো কোথাও পানি বিপৎসীমার ওপরে যায়নি।
২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৭৭ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৪২ সেন্টিমিটার, ছাতকে ৫৬ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ৬৯ সেন্টিমিটার ও দিরাইয়ে ৩৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এ ছাড়া কুশিয়ারার পানি আমলশীদে ৮৩ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৭১ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখোলে ৫৮ সেন্টিমিটার, মনু নদীর পানি মনুরেলব্রিজ পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার ও মৌলভীবাজারে ২৩ সেন্টিমিটার, ধলাই নদীর পানি কমলগঞ্জে ১২৬ সেন্টিমিটার, পিয়াইনের পানি জাফলংয়ে ১৬২ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইনের পানি সারিঘাটে ২১৯ সেন্টিমিটার ও গোয়াইনঘাটে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
রংপুর : উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এতে করে কানায় কানায় ভরে যাচ্ছে পুকুর, খাল-বিল, নদী-নালাগুলো। গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া ও ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ২৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ৮৮ মিলিমিটার, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৭, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৫৭, ডিমলায় ১৪, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৪৩ ও দিনাজপুরে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, আগামী দুই দিন রংপুর বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। তাই তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বর্তমানে তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
নোয়াখালী : দুই দিনে পাঁচ ঘণ্টার বৃষ্টিতে নোয়াখালী পৌরসভার আল ফারুক একাডেমি সড়ক, নতুন জেলখানা সড়ক, মধুপুর গ্রাম, ইসলামিয়া সড়ক ও হাউজিংসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সব সড়ক ও মধুপুর গ্রামের বাসাবাড়িতে হাঁটুপানি উঠেছে। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এ জলাবদ্ধতা নিরসন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খাল উদ্ধারের দাবিতে মাইজদী আল ফারুক একাডেমি স্কুলের ৩০০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গতকাল দুপরে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও মানববন্ধন করেছে। তারা অবিলম্বে পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে মাইজদী পৌরবাজারের ক্ষুদ্র কাঁচা শাকসবজি ব্যবসায়ী, মুরগি ব্যবসায়ীসহ ক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। কাঁচা বাজার হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে। দুর্ভোগে রয়েছে ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এ ছাড়া জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা পানি নোংরা ও ময়লা আবর্জনার কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিণত হয়েছে বলে আগত ক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান। নোয়াখালী পৌর প্রশাসক জালাল উদ্দীন জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য অভিযান চলছে এবং বর্ষার আগে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে।
নেত্রকোনা : উজানের ভারী বর্ষণ থামায় কমতে শুরু করেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর পানি। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেলেও রাত থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। স্থানীয়রা জানান, ভারতের মেঘালয়ে নতুন করে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সোমেশ্বরীসহ পাহাড়ি ঝরনা-ছড়ার পানি নতুন করে আর বৃদ্ধি পায়নি। যার ফলে পাহাড়ি ঢলের পানিও কমছে। তবে দীর্ঘদিন খরার পর টানা কয়েকদিন বর্ষণে নেত্রকোনার সব নদনদীতে পানি আসা শুরু করেছে। হাওরেও ঢুকছে পানি। কংস নদের পানি বিপৎসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো সাখাওয়াত হোসেন বলছেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে সীমান্তবর্তী নদনদীর পানি ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।
শেরপুর : শেরপুর জেলায় টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে গত তিন দিন নদনদীর পানি বাড়লেও ২৪ ঘণ্টা কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি কমেছে। শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বন্যার সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমেছে।