নির্বাচন ভবনের সামনে আড়াই ঘণ্টা বিক্ষোভ করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। পুনর্গঠন না হলে বর্তমান ইসির অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে এনসিপি। ঢাকার আগারগাঁওয়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি। দলটি মঙ্গলবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার দাবি জানিয়ে এ কর্মসূচি দিয়েছিল। এনসিপি ঢাকা মহানগরী শাখার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে নির্বাচন ভবনের সামনে জড়ো হন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ কর্মসূচি ঘিরে নির্বাচন ভবন এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল কোস্টগার্ড এবং পুলিশ। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ভবনের বাইরে ব্যারিকেড দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বেলা সোয়া ১টায় ব্যারিকেড ভেঙে নির্বাচন ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন এনসিপি নেতা-কর্মীরা। অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনের সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নেই। এটি বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এটি এখন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসি এখন আর কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এক্সিস্ট করে না। এটা বিএনপির একটা মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতা দিয়েছে জনগণ, এ সরকার জনগণের রক্তের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, রক্তের ম্যান্ডেটে বসে আপনারা বিএনপির পক্ষে কাজ করতে পারেন না। আপনারা বিএনপির কাছে নগর ভবন ছেড়ে দিতে পারেন না। আপনারা বিএনপির কাছে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ইলেকশন কমিশন ছেড়ে দিতে পারেন না।
নাসীরুদ্দীন বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবৈধ ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’ অনুযায়ী গঠিত, যা সে সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষ প্রত্যাখ্যান করেছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যখন সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল আমরা সে সময় নির্বাচন কমিশন গঠনের বিদ্যমান আইনের বিরোধিতা করেছিলাম। গত কয়েকটি নির্বাচনে যারা ভোট ডাকাতি করেছে তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। আমাদের এনসিপির দাবি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ আমরা দেখছি নির্বাচন কমিশন একটি নির্দিষ্ট দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ইসি পুনর্গঠন করে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। যারা ১৬ বছর মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল তাদের নির্বাচন কমিশনে রেখে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যারা স্বৈরাচারের সময় ভোট ডাকাতিতে সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপি উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা ৩১ দফা দিয়েছিলেন। আপনারা বলেছিলেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করবেন। কিন্তু আপনারা যখন প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজের দলের লোক পেয়ে গেলেন তখন আপনারা সংস্কারের কথা ভুলে গেলেন। নির্বাচন কমিশন এখন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। বিএনপির সালাহউদ্দিন সাহেবরা মুজিববাদী সংবিধান টিকিয়ে রাখতে চান। তাঁরা ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিতে চান। ইসিসহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিএনপি দখল করেছে বলে অভিযোগ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। জনগণের করের টাকায় চলা এসব প্রতিষ্ঠান দখলমুক্ত করতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘যদি আপনারা না করতে পারেন, তাহলে উপদেষ্টা প্যানেলে যারা বিএনপির রয়েছেন, তাদের দ্রুতগতিতে বের করে দিন।’ ‘বিএনপিপন্থি’ উপদেষ্টারা এসি রুমে বসে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘কেউ করছেন বিচারালয়ে, কেউ করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে, আর কেউ করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।’ বিএনপি লাশের রাজনীতি শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য গণ অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। তিনি ভারতের প্রেসক্রিপশনে দেশে মুজিববাদী সংবিধান রাখার জন্য কাজ করছেন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু সংবিধান নিষিদ্ধ হয়নি। সংবিধান নিষিদ্ধের জন্য তারা সংবিধান পোড়ানো কর্মসূচি করবেন। বাংলাদেশে কোনো মুজিবীয় সংবিধান থাকবে না।
ইসি পুনর্গঠন করার পর সংস্থাটির সক্ষমতা প্রমাণে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এনসিপির এই মুখ্য সমন্বয়কারী। এ মাঠে ‘কুসুম কুসুম খেলা’ চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘এনসিপি নেতারা যতদিন আছি জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় কোনো নির্বাচন হবে না।’ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়েছিলাম, নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশন ও সংবিধান নিষিদ্ধ হয়নি।’ এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশে অনতিবিলম্বে ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন এনসিপির বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধি।