মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। আর গোটা বিশ্বের সব সৃষ্টিকে নিয়োজিত করেছেন তাদের কল্যাণে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আসমানসমূহ ও জমিনের সব কিছু নিজ অনুগ্রহে, নিশ্চয়ই এতে অনেক নিদর্শনাবলি রয়েছে, এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে।’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ১৩)
পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় মহান আল্লাহর যে সৃষ্টিগুলো বেশি উপকারী, তার গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী উপাদান হলো জীববৈচিত্র্য।
তাই মানুষের দায়িত্ব জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রাণিকুলের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন জীবন নেই বা নিজ ডানার সাহায্যে এমন কোনো পাখি ওড়ে না, কিন্তু তারা তোমাদের মতো একটি জাতি।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮)
উল্লিখিত আয়াতের ‘তোমাদের মতো একটি জাতি’ বাক্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা তা দ্বারা যেমন প্রাণিকুলের শ্রেণিবদ্ধতা, সমাজবদ্ধতা বোঝানো সম্ভব, তেমনি তাদের অধিকার ও সংরক্ষণের নির্দেশনাও লাভ করা যায়।
আল্লামা ইবনে কুতাইবা (রহ.) আয়াতের ব্যাখ্যায় যেমনটি বলেছেন, ‘তারা খাদ্য গ্রহণ, জীবিকার অনুসন্ধান ও ধ্বংস থেকে রক্ষার দিক থেকে তোমাদের মতো।’ (তাফসিরে বাগাবি)
অর্থাৎ প্রাণিকুলের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত জীবন, জীবিকা ও বিচরণক্ষেত্র সংরক্ষণ করা ইসলামের দাবি।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন
প্রাণী-অধিকারবিষয়ক আয়াত ও হাদিস বিশ্লেষণ করলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জোর তাগিদ পাওয়া যায়, বিশেষত কোরআনের একাধিক স্থানে প্রাণিকুলকে উপকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাণীর উপমা পেশ করে, সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
যেমন— মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্য তাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার আছে এবং তা থেকে তোমরা আহার করে থাকো এবং তোমরা যখন গোধূলিলগ্নে তাদের চারণভূমি থেকে ঘরে নিয়ে আসো এবং প্রভাতে যখন তাদের চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ করো। তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেখানে প্রাণান্ত কষ্ট ছাড়া তোমরা পৌঁছতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫-৮)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ প্রাণিজগতের বহুমুখী উপকার ও সৌন্দর্য, মানবজাতির জন্য তাদের অস্তিত্বের গুরুত্ব এবং প্রাণিজগতের বিস্তৃতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। শেষোক্ত আয়াতে ‘শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন’ বাক্যটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কেননা শোভা শব্দের মধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ হওয়ার অর্থ এবং তা সংরক্ষণের দাবি আছে।
তাই মুসলমানদের উচিত জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যার যার অবস্থানকে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা। কোনো প্রাণী যদি বিপন্ন হয় এবং তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, তবে তা সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া। কেননা নুহ (আ.)-এর মহাপ্লাবনের সময় আল্লাহ তাআলা প্রাণিকুলের অস্তিত্ব রক্ষায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘অবশেষে যখন আমার আদেশ এলো এবং চুলা উথলিয়ে উঠল; আমি বললাম, তাতে উঠিয়ে নাও প্রতিটি শ্রেণির যুগলের দুটি করে।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৪০)
উল্লিখিত আয়াত থেকে যেসব শিক্ষা লাভ করা সম্ভব, তা হলো, প্রাণিকুলের অস্তিত্ব মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সংরক্ষণে মনোযোগী হতে হবে এবং প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা পায়।
লেখক : গবেষক
বিডি প্রতিদিন/কেএ