আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। দাবি আদায়ে ‘সর্বদলীয় জনমত’ গঠনের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর পাশাপাশি ডান, বাম, ইসলামি ছাড়াও ছোটবড়, নতুন-পুরোনো সব দলের সঙ্গে বৈঠক করছে দলটি। লক্ষ্য নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়। ইতোমধ্যে অর্ধশত দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। দাবি আদায়ে এখনই আন্দোলনের পথে না গিয়ে সংলাপ ও রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমাধান খুঁজছে দলটি। ঐকমত্য কমিশনেও বিএনপির অবস্থান হলো ন্যূনতম সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারাই রাজপথে ছিলেন, আমরা সবার সঙ্গে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। এ আলোচনা শেষে কী করা যায় বা কী করা যায় না তা দেশবাসীকে জানানো হবে। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে সর্বদলীয় ঐক্য ও জনমত গঠন করতে চায় বিএনপি। ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু না বলে জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। প্রতিক্রিয়ায় ‘সন্তুষ্ট নয়’ বললেও রাজপথে আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে না। পরিবর্তে সংলাপকেই কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে তারা। ১৯ এপ্রিল ১২-দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করে দলটি। ওইদিন এলডিপির সঙ্গেও আলাদা বৈঠক হয়। এ লক্ষ্যে সিপিবি, বাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি ও গণসংহতি আন্দোলনের মতো দল ছাড়াও অন্তত ৫০টি ছোট ও মাঝারি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে নেতৃত্ব দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল মাহমুদ টুকু ও বরকত উল্লাহ বুলু। বিএনপির সঙ্গে ছোট পরিসরে বৈঠক হলেও বিভিন্ন ইস্যুতে সব দলের অবস্থান এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। যদিও তারা নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে একমত। তবে কৌশলগত কারণে জামায়াতে ইসলামীকে ঐক্যের প্রকাশ্য অংশীদার করতে চাইছে না। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছি। ডিসেম্বরের পর আমাদের দেশে প্রাকৃতিক অনেক দুর্যোগের শঙ্কা থাকে। এ ছাড়া রোজা শুরু হবে। তিনি বলেন, মানবিক করিডর দেওয়া বর্তমান সরকারের কাজ নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। মানবিক করিডর একসময় সামরিক করিডরে পরিণত হয়ে দেশের বিপর্যয় ডেকে আনবে। তা ছাড়া অনির্বাচিত সরকারের বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা মঙ্গলজনক নয়। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচন নিয়ে কর্মসূচির দিকে গেলে অন্য একটি পক্ষ ‘এ মুহূর্তে নির্বাচন নয়’ বলে প্রকাশ্যে আসলে পরিস্থিতি অযথা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।