ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ১৯ জুলাই ছিল এক ঘটনাবহুল দিন। এ দিন সারা দেশে ৫৬ জন প্রাণ হারান। আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার থেকে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড আর রাবার বুলেট ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ব্যর্থ হয়ে ওই দিন মধ্যরাতে সারা দেশে জারি করা হয় কারফিউ। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। নজিরবিহীন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে বন্ধ হয়ে যায় অনলাইনভিত্তিক সব যোগাযোগ। বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ১৯ জুলাই ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন। এ দিন রাজধানীতেই অন্তত ৪৪ জন শহীদ হন। আহত হয় অসংখ্য মানুষ। জেলায় জেলায় অসংখ্য স্থাপনা, জেলা পরিষদ, থানা আর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভেঙে ফেলা হয় নরসিংদী কারাগার। পালিয়ে যান কয়েদিরা। লুট হয় কারারক্ষীদের অস্ত্র।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে এ দিন শর্ত হিসেবে ৯ দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তাঁরা জানান, দাবিগুলো পূরণ করলে নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কি না। একই সঙ্গে দেশজুড়ে চলমান কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পরদিন ২০ জুলাইয়েও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তাঁরা।
ইন্টারনেটবিহীন মুহূর্তে সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের কাছ থেকে পাওয়া এসএমএসের সেই ৯ দাবিগুলো ছিল-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধ উপায়ে ব্যবহার করে ছাত্র হত্যা করার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রিপরিষদ, দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ঢাকাসহ যেসব জায়গায় শহীদ হয়েছে, সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করতে হবে। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে। যে পুলিশ সদস্যরা গুলি করেছেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ যেসব সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করেছে ও হামলার নির্দেশ দিয়েছে তাদের আটক করে হত্যা মামলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার দেখাতে হবে। দেশজুড়ে যেসব শিক্ষার্থী এবং নাগরিক শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ঢাবি, জাবি, চবি, রাবিসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনসহ দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিতে হবে এবং যেসব শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের কোনো ধরনের একাডেমিক-প্রশাসনিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে। মধ্যরাতে কারফিউ জারির পর বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সরকার ছাত্র-নাগরিকের প্রতিরোধের মুখে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি করেছে। আমাদের আহ্বান থাকবে-জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করবে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের আহ্বান-আপনারা সরকারকে সমর্থন না দিয়ে ছাত্র-নাগরিকের মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেবেন।’ জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানান কর্মসূচি পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ কক্সবাজার আর বান্দরবানে পথসভা ও পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেবে। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ‘গণ অভ্যুত্থান ২০২৪-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক সভা করবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সাত দফা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামী। রাজশাহী বিভাগে গণসংযোগ করবে আপ বাংলাদেশ।