রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধনকে প্রকাশ্য দিবালোকে গত ২৫ মে রাতে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া দুই শুটার মিজানুর রহমান মিম ও মো. হৃদয় চৌধুরীর স্বীকারোক্তিতে এমন তথ্য হয়। বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কিলিং মিশনে অংশ নেয় চারজন। হত্যার নেপথ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী হাসান ওরফে কলিন্স। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২৫ মে রাতে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাটে জাফর হাওলাদারের মুদির দোকানের সামনে চেয়ারে বসা ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ছিলেন কামরুল আহসান সাধন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের হাতে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাধনকে উপর্যুপরি গুলি করে হত্যা করে। পরে তারা ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে সাধনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থানা পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, পিবিআই এবং অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি ডিবি মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বাড্ডাকেন্দ্রিক ইন্টারনেট ব্যবসা, দোকান ও শপিং মলের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধন। কয়েক মাস আগে সাধনের কাছে চাঁদা দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মেহেদী। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তিনি খেপে যান। এরপরই তাকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে। এ জন্য মেহেদীর হয়ে কাজ করতে দুই শুটারকে অন্য এলাকা থেকে ভাড়া করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর সিসি ক্যামেরায় ফুটেজ দেখে এই দুই শুটারসহ চারজনকে শনাক্ত করে ডিবি। এর মধ্যে দুই শুটারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিটি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। মূলত এ ব্যক্তিকেই সাধনকে হত্যার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিল মেহেদী। তাকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে এবং যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তাকে গ্রেপ্তারের পরই আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট খুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই শুটার ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন কিলিং মিশনে ব্যাকআপ হিসেবে অংশ নেওয়া আল আমিন। শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর ঠিক করা ব্যক্তির নির্দেশ পাওয়ার পরই কিলিং মিশনে অংশ নেয় চারজন। কিলিং মিশন শেষ করার পর দুই শুটার ঢাকা থেকে পালিয়ে যায় এবং তাদের চেহারায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে। এমনকি ঘটনার সময় ব্যবহৃত পোশাক নষ্ট করে এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পানিতে ফেলে দেয়। এদিকে, বিএনপি নেতা সাধন হত্যার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল ডিশ ব্যবসার কমিশন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কোনো একটি গ্রুপের সদস্যরা তাকে হত্যা করেছে।
এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় আত্মগোপনে থাকা সাধনের মামা মাহবুবের সঙ্গে মেহেদীর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ধারণা করা হয়, মাহবুব ও মেহেদীর দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয়েছে সাধন। ডিবি পুলিশের তদন্তেও উঠে এসেছে মেহেদীর নির্দেশে কিলিং মিশন বাস্তবায়নের তথ্য।
আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হরলাল কীর্তনীয়া বলেন, আমার মক্কেল মিজানুর রহমান মিমকে গত ২ জুলাই ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ৪ জুলাই গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে ৫ জুলাই আদালতে নেওয়া হয়েছে। যেখানে কোনো আসামিকে ২৪ ঘণ্টার বেশি রাখা আইনের লঙ্ঘন।
ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, সাধন হত্যার তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।