মানুষ জীবনে যা উপভোগ করে, সবই তার রিজিক। তবে রিজিক পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত ব্যবহার্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত তা প্রাপ্তি বা অর্জনের মাধ্যম হালাল তথা বৈধ হতে হবে। হারাম বস্তু হালাল পন্থায় অর্জন করলেও তা যেমন হারাম, অনুরূপ হালাল বস্তু হারাম পন্থায় উপার্জন করলেও তা হারাম।
হালাল উপার্জন স্বতন্ত্র একটি ইবাদত; যা দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত। কেয়ামতের ভয়ানক দিবসে মহান আল্লাহ প্রত্যেক বিশ্বাসী বান্দাকে পাঁচটি প্রশ্ন করবেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন হবে, তুমি কোন পথে উপার্জন করেছ? তাই ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম।
মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র খাদ্যবস্তু আছে তা হতে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৬৮)
অজু ছাড়া যেমন নামাজ শুদ্ধ হয় না, ঠিক তেমনি হারাম উপায়ে উপার্জিত খাবার ভক্ষণ করে ইবাদত বা দোয়া করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। দয়াময় আল্লাহ সব নবী-রসুলকে নেক আমলের নির্দেশের পূর্বে হালাল উপার্জিত আহার ভক্ষণের নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, হে রসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো এবং সৎকর্ম করো। তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে আমি পূর্ণ অবগত। (সুরা মু’মিনুন, আয়াত ৫১)
মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৭২)
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ওই দেহ জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাদ্য) থেকে উৎপন্ন। (সুনানে তিরমিজি)
অন্যায়ভাবে ও অপকৌশলের মাধ্যমে কারও সম্পদ আত্মসাৎ করাকে ইসলাম হারাম সাব্যস্ত করেছে।
মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভক্ষণ করো না। (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৯)
হজরত নবী করিম (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানের অন্তরের সন্তুষ্টি ছাড়া তার মাল অন্য কারও জন্য হালাল নয়। (সহিহুল জামে)
হালাল রিজিক উপার্জন অন্যতম একটি ফরজ ইবাদত। চাকরি এবং ব্যবসা উভয় ক্ষেত্রে হালালের প্রতি লক্ষ রাখা প্রতিটি মুমিনের জন্য বাঞ্ছনীয়। শ্রমিক তার মনিবের কাজে ফাঁকি দিলে তার উপার্জন হালাল হবে না। মনিব তার শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা না দিলে তার সম্পদও হালাল হবে না।
ব্যবসায়ী যদি কোনোরূপ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পণ্য বিক্রয় করে, যেমন পণ্যে ভেজাল, ওজনে কম, বাজারমূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দাম এবং মিথ্যা বলে পণ্য বিক্রয় করে, তবে তার উপার্জন হালাল হবে না।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের কাজ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন লোকদের মেপে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে তাদের মহাদিবসে জীবিত করে ওঠানো হবে? (সুরা মুত্বাফ্ফিফীন, আয়াত ১-৪)
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের কাছে এমন এক জমানা আসবে যখন সে পরোয়া করবে না, সে কোথা থেকে উপার্জন করছে। হালাল থেকে নাকি হারাম থেকে । (সহিহ বুখারি)
পক্ষান্তরে সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। (সুনানে তিরমিজি)
মহানবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বহস্তে উপার্জিত হালাল রিজিক আহার করল, তাঁর জন্য জান্নাতের সব দরজা খোলা থাকবে। অন্য হাদিসে এসেছে, সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। (জামিউল আখবার)
বছরে একবার সম্পদের জাকাত আদায় না করলে সমুদয় সম্পদ অবৈধ ও অপবিত্র হয়ে যায়।
লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা