সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার পর গাজা উপত্যকার ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে পাস হওয়া এই প্রস্তাবে গাজার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন ও মোতায়েনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
১৩-০ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হলেও চীন ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। তারা এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণের অভাব এবং গাজার ভবিষ্যতের ওপর জাতিসংঘের সুস্পষ্ট ভূমিকার অনুপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, আইএসএফ হবে বহুজাতিক সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনী। যাদের প্রধান কাজ হবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করার ওপর নজর রাখা এবং গাজা উপত্যকায় নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা। তাত্ত্বিকভাবে, এই বাহিনী ইসরায়েল ও মিশরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে গাজা উপত্যকাকে সামরিকীকরণমুক্ত করা।
আইএসএফের নির্দিষ্ট কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া, মানবিক করিডোর সুরক্ষিত রেখে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং একটি নতুন ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করা। যে বাহিনী হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) অধীনে থাকবে না। মূল কথা হলো, এই বাহিনীটি গত ১৯ বছর ধরে হামাস পরিচালিত গাজার নিরাপত্তাসংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার গ্রহণ করবে।
বাহিনীতে কারা থাকবে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট বার্তা আসেনি। তবে ট্রাম্পের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়া সৈন্য পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মিশর, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোও আলোচনায় আছে। যদিও আমিরাতের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তার দেশ এতে অংশ নেবে না। মিশরকে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিতে দেখা যেতে পারে বলেও কয়েকটি সূত্র জানাচ্ছে। অন্যদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকলেও তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার কারণে ইসরায়েল গাজায় তুর্কি সেনা মোতায়েনে রাজি নয়।
গাজার বর্তমান শাসক গোষ্ঠী হামাস এই প্রস্তাবটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এই প্রস্তাব গাজা উপত্যকার ওপর আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, এটা তাদের জনগণ মানতে রাজি নয়। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে এবং হয় সহাবস্থানে আসতে হবে অথবা নিরাপদ পথ বেছে নিয়ে গাজা ত্যাগ করতে হবে। হামাস বারবার বলে আসছে, তারা শাসন ছেড়ে দিতে রাজি, তবে অস্ত্র সমর্পণ করবে না।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের এই ভোটাভুটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি হামাসকে চূড়ান্ত রূপে নিরস্ত্র করতে চান। তিনি ইসরায়েলি সংসদে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হয়নি এবং হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে।
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল