দেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে উচ্চ ঝুঁকিতে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ক্রেডিট রেটিং সংস্থা সিঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের অতিসাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ৯ স্কোর পেয়েছে। এ স্কোর ১ থেকে ১০-এর মধ্যে মাপা হয়। যেখানে ১ অর্থাৎ সবচেয়ে কম এবং ১০ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে আমাদের ৯ অর্জন অত্যন্ত নেতিবাচক। এ হিসেবে বাংলাদেশ এখন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকিংব্যবস্থার তালিকাভুক্ত। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতের এ করুণ অবস্থার পেছনে প্রধানত অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, বিশেষ করে কিছু শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের শাসনব্যবস্থায় ব্যর্থতা, তারল্যসংকট এবং সার্বিকভাবে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় দুর্বিনীত দুর্নীতি দায়ী। প্রকাশিত খবরের তথ্য বলছে, গত দুই বছরের বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক চারটি ইসলামি ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে। ওই ব্যাংকগুলো অনিয়ম-দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে ছিল। সেগুলোতে অভ্যন্তরীণ অবৈধ লেনদেন, তারল্য ঘাটতি ও জালিয়াতির অভিযোগে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুনর্গঠন করা হয় পরিচালন পর্ষদ। এগুলোকে জরুরি তারল্য সহায়তাও দেওয়া হয়, যা শরিয়াভিত্তিক এই ব্যাংকগুলোর ওপর জনআস্থা রক্ষার জন্য খুবই জরুরি ছিল। ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ভূমিকা ছিল দায়িত্বশীল ও সময়োচিত। বলা যায়, এসবের সূত্রেই নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সিঅ্যান্ডপির রিপোর্টে ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকির ধারা’ সূচকে বাংলাদেশ ‘স্থিতিশীল’ অবস্থানে রয়েছে। ‘অর্থনৈতিক ভারসাম্য’ সূচকেও তুলনামূলক ভালো অবস্থান। তারপরও আগামী বছর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাত চাপে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের রিপোর্ট। তাদের মতে, খাতটির কাঠামোগত ত্রুটি, সম্পদের অবনতি ও দুর্বল লাভজনকতার কারণে এই চাপ থাকবে। ব্যাংক খাতে সমস্যা, সংকট, চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে দিগন্তবিস্তারী সম্ভাবনা। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সম্ভাবনা বাস্তবায়নে পরিচালন নীতিমালা সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্র সংস্কারের বর্তমান সময়ে ব্যাংক খাতও সোজা পথে চলার পথনির্দেশ পাক।
একই সঙ্গে কঠোরভাবে তা তদারকির ব্যবস্থাও থাকা আবশ্যক।