মুসলমানদের সম্মানজনক অবস্থান ও প্রভাব বহাল করতে হলে অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে হবে। বিশ্বে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে হলে কেবল বস্তুগত ও সামাজিক নয়, ইসলামের ভিত্তিতে ঐক্য সুসংহত করতে হবে। পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর করে তুলতে হবে। নিজ আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে, অতঃপর সমগ্র বিশ্বে ঐক্যের বন্ধন জোরদার করতে হবে। সামগ্রিক দীনের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ব্যতীত না দুনিয়ার জীবনে মুসলমান সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে, না আখেরাতের জীবনে মহান আল্লাহপাকের দরবারে সম্মান ও নাজাতের অধিকারী হতে পারবে।
বর্তমান অবস্থায় মুসলমানদের জন্য সর্বপ্রকার সংঘর্ষ এড়িয়ে চলা একান্ত প্রয়োজন। নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সংঘর্ষের সূত্রপাত না হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। বিজাতীয়দের হুমকির মুখে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই, অপপ্রচারে বিচলিত অথবা উগ্রও হতে নেই।
সাধারণত ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডার কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে মোড় নেয়। প্রোপাগান্ডার সঠিক তত্ত্ব তালাশ না করে পদক্ষেপ নিলে পরিণামে ক্ষতি হয়, লজ্জিত হতে হয়। অনেক সময় তুমুল সংঘর্ষে রূপ নেয়, নিরপরাধ মানুষ আক্রান্ত হয় এবং হতাহতের ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জুলুম অত্যাচার কোনো দিন কাম্য হতে পারে না। মহান আল্লাহপাকও পছন্দ করেন না। নিরপরাধীদের রক্ত ঝরলে আল্লাহপাকের সাহায্য ও রহমতের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণার মোকাবিলায় মুসলমানদের অবশ্যই ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যথাসম্ভব সর্বপ্রকার সংঘর্ষ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে জুলুম-অত্যাচারের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। রসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থেকো। কেননা মজলুম আল্লাহপাকের কাছে স্বীয় হক এবং প্রাপ্য হাসিলের জন্য প্রার্থনা করে থাকে, আর আল্লাহপাক মানুষকে তার প্রাপ্য থেকে মোটেই বঞ্চিত করেন না। আল্লাহপাক কোনো অবস্থাতেই জুলুম-নির্যাতন পছন্দ করেন না। সুতরাং সর্বাবস্থায় জুলুম করা থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা জরুরি। তবে মুসলমানদের ইজ্জত সম্মানের ওপর আক্রমণ হলে, তাদের ধর্মীয় নিদর্শনাবলির প্রতি অবমাননাকর আঘাত হানলে শত্রুদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা, প্রকৃত সম্মান রক্ষা করা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য ও নিদর্শনাবলির হেফাজত করা একান্ত ফরজ ও আইনগত অধিকার। যদি শত্রু পক্ষ মুসলমানদের জানমাল ও ইজ্জত সম্মানের ওপর আক্রমণ চালায়, মুসলমানদের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করে এবং মুসলমানদের ধর্মের ওপর তাদের ধর্মীয় নিদর্শনাবলি হুমকি হয়ে দাঁড়ায় এমতাবস্থায় মুসলমানদের নীরব ভূমিকা পালনের অনুমতি ইসলাম দেয় না। কাপুরুষতার শিক্ষা ইসলামে নেই। এমতাবস্থায় শত্রুপক্ষের আক্রমণের দাঁতভাঙা জবাব প্রদানে ইসলামের কঠোর নির্দেশ রয়েছে। শত্রুদের কঠোর হস্তে দমন করা, তাদের অসৎ উদ্দেশ্যকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া, আগ্রাসী শত্রুদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া ধর্মীয় কর্তব্য।
যাতে করে অদূর ভবিষ্যতে কোনো বিধর্মী মুসলমানদের জান, মাল, ইজ্জত-সম্মানের ওপর আক্রমণের সাহস তারা না পায়, এ ধরনের আক্রমণের কথা ভাবতেও ভয় পায়। জান, মাল ও ইসলামের হেফাজত করা ইসলাম ধর্মে এত অধিক গুরুত্বপূর্ণ যে, এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জীবন উৎসর্গকারীকে শাহাদাতের মর্যাদায় সমাসীন করা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নিজ সহায়-সম্পদ হেফাজতের কারণে কতল হয়, তাকে শহীদের মর্যাদা দান করা হয়। যে ব্যক্তি নিজের প্রাণরক্ষার সময় মৃত্যুবরণ করে তাকে শহীদের সম্মানে ভূষিত করা হয়। যে ব্যক্তি ধর্মের সংরক্ষণে মৃত্যুবরণ করে তাকে শহীদের মর্যাদার অধিকারী করা হয়। যে ব্যক্তি নিজ পরিবার-পরিজনকে সংরক্ষণের সুবাদে মারা যায় তার মর্যাদা শহীদের মর্যাদা। (তিরমিজি)। মুসলমানরা শান্তিপ্রিয়। তারা সংঘাতের পথ অবশ্যই বর্জন করে চলে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মোটেও অসতর্ক ও উদাসীন হওয়ার অবকাশ নেই। সর্বদা নিরাপত্তাব্যবস্থা সুসংহত রাখতে হবে। শত্রু বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং তাদের অত্যাধুনিক সমর-সরঞ্জামের পরিপ্রেক্ষিতে মোটেই বিচলিত হবে না। ভীত ও হীনবল হবে না মোটেও। যারা প্রকৃত মুসলমান, তারা কোনো দিন শত্রুর সমর-সরঞ্জাম দেখে মনোবল হারায় না, প্রভাবান্বিত হয় না। বরং এমতাবস্থায় তাদের ইমানি শক্তি ও আল্লাহপাকের প্রতি নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ