শেখ মুজিবের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লিখে দিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পদ বাগিয়েছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী! শুধু তাই নয়, পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কাজের বিনিময়ে জাবেদ পাটোয়ারীর দলের ১২৩ সদস্যের প্রত্যেককে দিয়েছিলেন একটি ফ্ল্যাট এবং ১ কোটি টাকা করে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) নথিতেই মিলেছে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য।
তথ্য মতে, ২০১২ সালে প্রকাশ পায় শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী। বইটির ভূমিকায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, শেখ মুজিবের চারটি খাতা ঘেঁটে সম্পাদনা-সংশোধনের পর প্রকাশ করা হয়েছে বইটি। যাতে উঠে এসেছে, পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানা ঘটনা ও চক্রান্তের গল্প। প্রায়ই শেখ হাসিনাকে এই বই থেকে বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিতে দেখা যেত, নেতা-কর্মীদের বলতেন এখান থেকে শিক্ষা নিতে। তবে সূত্র বলছে, এসবির একাধিক নথিতে দেখা যাচ্ছে এই বইটি আসলে লিখেছেন সাবেক পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারী ও তার নেতৃত্বে ১২৩ সদস্যের একটি দল। এসবির প্রধান হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্য এবং আনুগত্য নিশ্চিত করতে বইটি লেখেন জাবেদ পাটোয়ারী ও তার দল। এর ফলে ২০১৮ সালে জাবেদ নিয়োগ পান আইজিপি হিসেবে। আর আত্মজীবনী বইটি লিখতে যে ১২৩ জন সদস্য কাজ করেন তারা পায় রাজধানীর ধানমন্ডি, বসুন্ধরা ও মিরপুরে কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট এবং নগদ ১ কোটি করে টাকা। এর সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। যদিও এর আগে তারই ব্যাচমেট মেধাতালিকায় নিচের দিকে থাকা এ কে এম শহীদুল হক আইজিপির পদ বাগিয়ে নেন। পরবর্তীতে অসমাপ্ত আত্মজীবনী লিখে দিয়ে তিনি মন জয় করে নেন শেখ হাসিনার। সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লা আল মামুন তার জবানবন্দিতে সম্প্রতি দাবি করেন, ২০১৮ সালের রাতের ভোট হয় জাবেদ পাটোয়ারীর পরামর্শেই। বিষয়টি নিয়ে সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কোনো ফোন নম্বরেই পাওয়া যায়নি। তবে সরকারি সূত্রের দাবি, ৫ আগস্টের পর সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে জাবেদ পাটোয়ারীকে বরখাস্তের পর দেশে ফিরতে বলা হলেও সেখান থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেছেন, এমন প্রশ্ন যেহেতু উঠেছে বিষয়টি অনুসন্ধান হওয়া দরকার। তিনি বলেন, যদি অভিযোগ ওঠে থাকে তবে অনুসন্ধান হওয়া উচিত। যেহেতু তহবিল থেকে টাকা-পয়সা দেওয়া হয়েছে।