কোনো দেশে বিপ্লবে, গণ অভ্যুত্থানে, এমনকি সামরিক অভ্যুত্থানেও যদি কোনো রাজনৈতিক সরকারকে উৎখাত করা হয় এবং সেই সরকারের প্রধান ব্যক্তি ও তার নিবিড় সহযোগী বা অপকর্মের দোসররা গণেশ উল্টে যাওয়ার আগেই তড়িঘড়ি পলায়ন না করেন, তাহলে অনিবার্য পরিণতি হতে পারে মৃত্যু, শারীরিক নির্যাতন অথবা গ্রেপ্তার। কিন্তু কারা এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনুরূপ অনিবার্যতার শিকার হতে পারেন তার মোটামুটি একটা ধারণা প্রাচীনকাল থেকে ঘটে আসা অনুরূপ ঘটনার ইতিহাস পাঠ করে এবং সাম্প্রতিককালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসাংবিধানিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের খবর পড়ে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে একটা ‘ঘটনা’ ঘটেছে,। ‘ঘটনা’ই বলছি; কারণ অনেকে এ ‘ঘটনা’কে ‘বিপ্লব’, এমনকি ‘গণ অভ্যুত্থান’ বলতেও দ্বিধা করেন। যেমন এই কিছুদিন আগ পর্যন্তও একশ্রেণির লোক ১৯৭১ সালকে বলত ‘গণ্ডগোলের বছর’। তাতে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাাধীনতা যেমন ম্লান হয়নি, তেমনি ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে কেবল একটি ‘ঘটনা’ বললেও বিপ্লবের অর্জন কিছুমাত্র ম্লান হয় না। যা ঘটার ঘটে গেছে। শেখ হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। জীবন বাঁচাতে তিনি পলায়ন করেছেন। তাকে অনুসরণ করে তার সব সহযোগী হয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অথবা আত্মগোপনে আছেন, কিছুসংখ্যক আটক হয়ে শ্রীঘরে আছেন।
এ ঘটনায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জাজ (সম্মানিত) খতিব বা প্রধান ইমাম মুফতি মো. রুহুল আমিনকে আল্লাহর ঘর মসজিদ ছেড়ে তাৎক্ষণিকভাবে কেন পলায়ন করতে হয়েছিল, তা আমার মতো অনেকের কাছে এক বিস্ময়ের কারণ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের দুই দিন পর মুফতি রুহুল আমিনও পলায়ন করেন। এ কথা সত্য, শেখ হাসিনার শাসনামলেই তিনি জাতীয় মসজিদের খতিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কীভাবে সরকারের অপকর্মের সহযোগী ছিলেন যে পলায়ন ছাড়া তার আর কোনো পথ খোলা ছিল না, তাও অনেকের বোধগম্য নয়।
সরকার উৎখাতের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মুফতি মো. রুহুল আমিনের পলায়নের খবর পাঠ করার পর পাকিস্তান আমলে লেখা কবি শামসুর রাহমানের ‘তিনটি গোলাপ’ নামের একটি কবিতা মনে পড়েছে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা, যা পরবর্তীতে তাঁর কোনো কাব্যগ্রন্থে স্থান পায়নি। সেই কবিতায় তিনি লিখেছিলেন- ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তানের একটি এলাকা দখল করেছে, সেখানে গ্রামবাসী বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। গ্রামবাসী ইমাম সাহেবকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করলেও তিনি মসজিদ ছেড়ে যেতে রাজি হননি। ভারতীয় সৈন্যরা মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে পায়। তাকে জেরা করে, জানতে চায় মসজিদে কেউ লুকিয়ে আছে কি না। তারা তল্লাশি করার জন্য মসজিদে প্রবেশ করতে চাইলে ইমাম সাহেব বাধা দেন। তাদের বলেন, জুতা খুলে মসজিদে প্রবেশ করতে। সৈন্যরা তার বাধা অগ্রাহ্য করে তাকে গুলি করে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পড়তে ইমাম সাহেব আগের রাতে তার স্বপ্নে দেখা তিনটি গোলাপের কথা স্মরণ করেন। অন্যদিকে মুফতি রুহুল আমিনের ওপর ছাত্র-জনতার বিপ্লবের কোনো আঁচ না লাগলেও তিনি মসজিদ ছেড়ে পলায়ন করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, তিনিও আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্মের দোসর ছিলেন।
বিপ্লব সফল হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তার অন্যতম ছিল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট, অর্থাৎ শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি ঘোষণা। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হলেও যে দুই ব্যক্তি স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার থাকেন, তাদের স্বপদে বহাল থাকার এখতিয়ার সংবিধান নিশ্চিত করেছে। কিন্তু সংসদ বিলুপ্তির ২৬ দিন পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তার অজ্ঞাতবাস থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। কেন পাঠিয়েছেন, তাও অজ্ঞাত। কারণ সংসদ বিলুপ্তির সঙ্গে তার পদ বিলুপ্তির সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের সংবিধান তাকে পদত্যাগ করার বা স্পিকার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ দেয়নি। সরকারের তিনটি বিভাগের একটি ‘আইন বিভাগ’ বা জাতীয় সংসদের স্পিকার। রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদায় স্পিকারের অবস্থান তৃতীয়, সংবিধান যাকে রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ দিয়েছে। যিনি পরবর্তী জাতীয় সংসদ অর্থাৎ ত্রয়োদশ সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ করানো এবং নতুন একজন স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার পদে বহাল থাকার অধিকারী। তিনি পদত্যাগ করলেও এ দায়িত্বগুলো পালন করার আগ পর্যন্ত তার পদত্যাগ গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। সংবিধানে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের পদ কীভাবে শূন্য হবে, সে সম্পর্কিত বিধানে স্পিকারের পদ শূন্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে; যার মধ্যে স্পিকারের সংসদ সদস্য পদ না থাকা, মন্ত্রীপদ গ্রহণ করাসহ পাঁচটি কারণের কথা বলা হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের স্পিকার সম্পর্কিত বিধানগুলোর ভিন্ন ধরনের পরিবর্তন না ঘটা পর্যন্ত চারবারের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী স্বপদে বহাল।
রাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ ও নিরাপদ পদ আর দ্বিতীয়টি নেই। তবু স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর আত্মগোপনে চলে যাওয়া এক মহাবিস্ময়। ঘটনার তাৎক্ষণিক উত্তেজনায়, অর্থাৎ গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পলায়ন দিবসে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গণভবনের মতো জাতীয় সংসদ ভবনেও প্রবেশ করেছিল। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ আরও কজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সেদিন সংসদ ভবনের ভূগর্ভস্থ কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১২ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ধরনের বিস্ফোরণোন্মুখ ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় বিশ্বের বহু দেশে যেসব অঘটন ঘটে, আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশে অনুরূপ বিপর্যয়কর কিছু ঘটেনি। বিশেষ করে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর ক্ষেত্রে তো নয়ই। আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন, তিনিই তার সম্মান রক্ষা করেছেন। তবু জনগণের অজানা কোনো অপরাধ তিনি কি করেছেন, যে কারণে লোকচক্ষুর অন্তরালে কাটাচ্ছেন?
শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের পাঁচ দিন পর পদত্যাগ করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের আরও পাঁচজন বিচারপতি। তারা তাদের পদে থাকার নৈতিক ভিত্তি হারিয়েছিলেন। পদত্যাগ ছাড়া তাদের উপায় ছিল না। কারণ তারা শেখ হাসিনার অনুগত হিসেবে বিচার বিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভাগে পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা করার এর চেয়ে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকার ছাড়া আর কে করতে পারে। শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানও একই কাজ করেছিলেন ১৯৭৫ সালে ‘বাকশাল’ কায়েম করে। রাষ্ট্রপতির অর্থাৎ তার ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার উদ্দেশ্যে একদিকে তিনি জাতীয় সংসদের ক্ষমতা খর্ব করেন, অন্যদিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে বিচার বিভাগকে কার্যত নির্বাহী বিভাগ অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছিল। উচ্চ আদালত যাতে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে না পারে সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছিলেন শেখ মুজিব। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি গণতন্ত্র চেয়েছে এমন কোনো দলের অস্তিত্ব কখনই ছিলই না, শেখ হাসিনার বিদায়ের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অন্য দলের লোকজনের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনে বরং ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করত। তবে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। ফলে বাংলাদেশে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বিচার বিভাগও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সামরিক একনায়কদের শাসনামলেও বিচার বিভাগকে এমন শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি।
শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮-এর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নামেমাত্র নির্বাচন করে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ক্ষমতা নিজ হাতে রেখে জাতীয় সংসদকে সম্পূর্ণভাবে তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। তার নেতৃত্বকে প্রশ্ন করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। তার মন্ত্রিসভাকে জাতীয় সংসদের জবাবদিহির মুখে পড়তে হতো না। মন্ত্রীরা বিনা প্রশ্নে শেখ হাসিনার আনুগত্যসহ যে কোনোভাবে তুষ্ট করতে পছন্দ করতেন। সরকারের তিন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ তিনিই করতেন। তার শাসনে বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন ছিল সে সম্পর্কে ২০১৭ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর ওপর সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের কথা অনেকের মনে থাকতে পারে। সেই রায়ে বলা হয়েছে- ‘নিম্ন ও উচ্চতর বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পোস্টিং এবং পদোন্নতিসহ বিভাগীয় শৃঙ্খলা ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার যদি নির্বাহী বিভাগের হাতে রাখা হয়, সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা থাকতে পারে না।’
শুধু বিচার বিভাগের কর্মকর্তা নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির প্রশ্ন নয়, সরকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের নিয়ন্ত্রণও বজায় রেখেছিল এবং ‘সরকার’ মানেই শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্ত। উচ্চতর আদালতের বিচারপতিদের নিয়োগের জন্য পৃথক আইন প্রণয়ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দিকেও শেখ হাসিনা দৃষ্টি দেননি। বরং সংসদ সদস্যদের উসকে দিয়েছিলেন উচ্চতর আদালতের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়তে। সংসদে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের ঢালাওভাবে আক্রমণের অনুমতি দিয়েছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সরকারের প্রধান নির্বাহী এবং তার দলের আইনপ্রণেতারা যদি জাতীয় সংসদে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত এখতিয়ার তাদের ‘একক ক্ষমতাধর নেতা’র ওপর ছেড়ে দেয়, সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের পক্ষে কতটা স্বাধীনতা ভোগ করা সম্ভব? সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে শেখ হাসিনা যেভাবে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন, এর বাইরে তার আমলের অন্য বিচারপতিদের সরকারের সঙ্গে সায় দেওয়া ছাড়া কি আর কোনো উপায় ছিল?
আওয়ামী লীগের মতো বিভেদ ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দল এবং শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার মতো ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার মতো একদেশদর্শী নেতার আবির্ভাব দেশে দেশে যুগে যুগে ঘটবে ভেবেই ‘ক্ষমতার বিভাজন’ এর ধারণার মূল উদ্গাতা খ্যাত ফরাসি একজন বিচারক, ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক দার্শনিক চার্লস লোওস, যিনি ‘ব্যারন ডি মন্টেসকিউ’ (১৬৮৯-১৭৫৫) বলে গেছেন, কেন সব ক্ষমতা এক হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া দেশ ও জনগণের জন্য বিপজ্জনক। তিনি বলেছেন, ‘যখন আইন প্রণয়ন এবং নির্বাহী ক্ষমতা একই ব্যক্তির কাছে থাকে অথবা অভিন্ন একদল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ন্যস্ত থাকে, সেখানে কোনো স্বাধীনতা থাকতে পারে না। কারণ এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হতে পারে যে, কোনোভাবে একই সম্রাট অথবা সিনেট তাদের স্বেচ্ছাচারী উপায়ে নিপীড়নমূলক আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করবে।’ যদি তিনটি ক্ষমতা- নির্বাহী, আইন ও বিচার একজন ব্যক্তি অথবা দলবিশেষের কাছে থাকে তাহলে কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে মন্টেসকিউ বলেছেন, ‘যদি একই ব্যক্তি অথবা একই গোষ্ঠী, তা অভিজাতদের মধ্য থেকে হোক, অথবা জনগণের মধ্য থেকে হোক, এ তিনটি ক্ষমতা, যথাক্রমে আইন প্রণয়ন, জনসমষ্টির প্রস্তাবগুলো কার্যকর করা এবং ব্যক্তিবর্গের কার্যকারণের জন্য বিচার করা তাদের ওপর ন্যস্ত হলে সবকিছুর অবসান ঘটবে।’
শেখ হাসিনা তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে সরকার গঠন করে ‘জনগণ দ্বারা নির্বাচিত’ দাবি করেছেন। বিরোধী জনমতকে অস্বীকার করে ও বিরোধী দলকে দাবিয়ে ‘আইনের শাসন’ এবং ‘ন্যায়বিচারের’ নামে সব অপকর্ম, হত্যা, লুণ্ঠন করেছেন। ন্যায়ের নামে আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেয়ে বড় স্বেচ্ছাচার ও পীড়ন আর কিছু হতে পারে না। শেখ হাসিনা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাকে যারা দেশের সর্বনাশ ঘটাতে, জনগণকে শাসক ও তার দলের সেবাদাসে পরিণত করতে এবং দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করার যৌক্তিকতা দাঁড় করানোর শলাপরামর্শ দিয়েছেন, জনগণের বিরুদ্ধে তাকে আরও কঠোর হতে সহায়তা করেছেন তারা অপরাধী। এহেন ব্যক্তিরা মসজিদের ইমাম, সংসদের স্পিকার অথবা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি যাই হোন না কেন, তাদের অপরাধী মন তাদের পলায়ন করতে, আত্মগোপনে যেতে ও পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।
লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী, সিনিয়র সাংবাদিক