দেশের তৈরি পোশাকখাতে সংশ্লিষ্ট উচ্চমূল্য সংযোজিত পণ্য ও বৈশ্বিক একীভূতকরণের লক্ষ্যমাত্রা ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে সুসংহত আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে আবারও ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৬তম ইন্টেক্স বাংলাদেশ এক্সিবিশন ২০২৫।
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে আগামী ২৫ জুন শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন চলবে ২৭ জুন পর্যন্ত। এবারের আয়োজনটি বৈশ্বিক টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল বাণিজ্যে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নেতৃত্ব ও গুরুত্বকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে এই মেলা দেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল সোর্সিং মেলা আরও বৃহৎ পরিসরে উপস্থাপনে কাজ করছে ইন্টেক্স এক্সিবিশনের আয়োজক ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়া এক্সিবিশন অ্যান্ড প্রমোশন প্রাইভেট লিমিটেড। শতাধিক প্রদর্শক ও হাজারো ব্যবসায়িক ক্রেতাদের একত্রিত করে ইন্টেক্স বাংলাদেশ উচ্চমূল্যের ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও শিল্পায়নে শক্তিশালী অবদান রেখে চলেছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পখাতকে শুধু উৎপাদনের পরিমাণে নয়, বরং মান, টেকসইতা ও পণ্যের উৎকর্ষতার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ইন্টেক্স বাংলাদেশ ২০২৫ এই রূপান্তরের সাথে সুসংগত, যেখানে এশিয়া ও অন্যান্য দেশের শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারী, নির্মাতা এবং উদ্ভাবকরা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে প্রস্তুত।
এই এক্সপোতে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো তুলে ধরবে পারফরমেন্স ফেব্রিক্স, উচ্চমানের সুতা, কেমিক্যাল, সার্টিফিকেশন ও কমপ্লায়েন্স সলিউশন এবং স্থানীয় মার্কেটপ্লেসের সেবা। প্রদর্শনীতে ভারত থেকে অংশগ্রহণকারীরা তুলা ও ব্লেন্ডেড ফেব্রিক্স, সুতা, ফাংশনাল টেক্সটাইল, এমব্রয়ডারি, লেইস, জাকার্ড, ডিজিটাল প্রিন্ট ও টেকসই ফাইবার উপস্থাপন করবে। চীন থেকে আসা প্রদর্শকদের পণ্যসমূহের মধ্যে থাকবে সিনথেটিক ও টেকনিক্যাল ফেব্রিক্স, ওয়ার্প নিটস, এমব্রয়ডারি ফেব্রিক্স, আউটারওয়্যার টেক্সটাইল, ট্রিমস ও ফ্যাশন এক্সেসরিজ। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে থাকবে সিম টেপ, অ্যাডহেসিভ ফিল্ম ও গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির জন্য ডেকো ফিল্ম। থাইল্যান্ড ও জাপানের কোম্পানিগুলো প্রদর্শন করবে প্রিমিয়াম শার্টিং ও স্যুটিং ফেব্রিক্স, সার্কুলার নিটস, উদ্ভাবনী ১০০% বায়োডিগ্রেডেবল কোলাজেন ফেব্রিক্স এবং উন্নতমানের বোনা পণ্য।
ইন্টেক্স বাংলাদেশ ২০২৫ এমন একটি কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করছে যেখানে সোর্সিং ও স্ট্র্যাটেজির মিলন ঘটে। ডিজাইন, মার্চেন্ডাইজিং, পণ্য উন্নয়ন এবং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের পেশাজীবীদের জন্য এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ নিয়ে আসছে। প্রদর্শনীর পাশাপাশি আয়োজন করা হবে ইন্টারঅ্যাক্টিভ বিজনেস ফোরাম, যেখানে মিলবে ব্যবসায়িক মতবিনিময়ের সুযোগ ও মূল্যবান মার্কেট ইনটেলিজেন্স। এবারের আসর বিশেষভাবে বাংলাদেশের ফ্যাশন-ফোকাসড, পরিবেশবান্ধব ও উদ্ভাবন-নির্ভর শিল্প উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের শীর্ষ সংগঠন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক চেম্বারের সমর্থন অর্জন করেছে ইন্টেক্স বাংলাদেশ ২০২৫। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিজিসিসিআই), ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই), ল্যাটিন আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এলএবিসিসিআই), কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেবিসিসিআই), ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই) এবং ইউরোচ্যাম বাংলাদেশ। এই অংশীদারিত্ব ইন্টেক্সের বৈশ্বিক টেক্সটাইল অর্থনীতির সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি সংযোগের গুরুত্বকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।
ইন্টেক্সের এই বেড়ে ওঠা সফলতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য, যেখানে বাংলাদেশ কেবল একটি সরবরাহকারী দেশ নয়, বরং একটি কৌশলগত উৎপাদন ও উদ্ভাবনের অংশীদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে।
ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়া -এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আরতি ভগত বলেন, ‘ইন্টেক্স বাংলাদেশের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শিল্পকে উচ্চমানের সরবরাহকারী, বৈচিত্র্যময় পণ্য উদ্ভাবন এবং দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার সুযোগের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা। আজ এই প্ল্যাটফর্মটি এমন একটি বিশ্বস্ত জায়গায় পরিণত হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ কেবল একজন সরবরাহকারী নয়, বরং একজন কৌশলগত অংশীদার হিসেবেও বিশ্ববাজারের সাথে আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করতে পারে।’
বাংলাদেশ যখন তার রপ্তানি সক্ষমতা আরও বাড়াচ্ছে এবং ভবিষ্যতমুখী সোর্সিং পদ্ধতি গ্রহণ করছে, তখন ইন্টেক্স বাংলাদেশ ২০২৫ সেই উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে নতুন সুযোগ উন্মোচিত হবে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গড়ে উঠবে এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে উচ্চতর সাফল্যের পথ সুগম হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ