খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। পাশাপাশি তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব ইস্যুতে একটি সমন্বিত জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।
সোমবার (৫ মে) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী ‘কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজন করে অর্থনীতি বিষয়ক জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তা।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, বাণিজ্যের সব খাতে তথ্যের সঠিকতা না থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। গত সরকারের আমলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। এই অবস্থার উত্তরণে প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারের অঙ্গগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে ব্যয়ের যে মহোৎসব তৈরি হয়েছিল, তার দায় নাগরিকদের ওপর বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
রাতারাতি এসব পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে সেসব উন্নয়নে কাজ চলছে বলেও জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘গত বছর দেশে আলুর উৎপাদন ছিল এক কোটি টনের বেশি। কিন্তু সেই আলুর দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকার ওপরে উঠেছিল। অর্থাৎ পরিসংখ্যান মিলছে না। তথ্য-উপাত্ত সঠিক না থাকায় মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি হচ্ছে, যা সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধান্বিত করে ফেলছে। কবে দেশের এই পরিসংখ্যান ঠিক হবে, তা আমার জানা নেই। কারণ এটা আমার আওতার মধ্যে নেই।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ভোক্তার খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি কৃষকের স্বার্থও দেখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের কথা বলা হচ্ছে। সেটা করতে গিয়ে কোনো ক্ষতি করছি কি না, সেটিও দেখতে হবে। এ কারণে গবাদি পশুর ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এখানে ভোক্তার দিকটাও দেখতে হবে, যেন তারা নিরাপদ খাদ্য পায়।’
ফরিদা আখতার বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিতে গিয়ে কৃষকের দিকটা সেভাবে দেখা হয় না। শহুরে মানুষের খাদ্যের জোগান ও দাম নাগালে রাখতে আমদানির মাধ্যমে কৃষকের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়। আমাদের খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে হবে, যাতে ভোক্তা ও কৃষক দুই পক্ষই উপকৃত হয়।’
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের খাদ্যতালিকায় নিরাপদ কোনো খাবার নেই, সবই বিষাক্ত। তিনি বলেন, কৃষির সঙ্গে বাংলাদেশের অস্তিত্ব জড়িত। বিশাল একটি জনসংখ্যা কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন খাতের সঙ্গে যুক্ত। তবু গণমাধ্যমে কৃষি ও কৃষকদের গুরুত্ব যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না। টেলিভিশন বা পত্রিকায় বন্যা, খরা, নদীভাঙন, ফসলের ন্যায্যমূল্য—এসব বিষয়ে যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার, তা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ কিছু কিছু খবর সামনে আনা একান্ত প্রয়োজন।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘দেশে বাছবিচারহীনভাবে কৃষির উৎপাদন চলছে, সেগুলোর সঙ্গে কৃষকের সম্পর্ক ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। একদিকে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, অন্যদিকে তাদের জীবনীশক্তি কমে যাচ্ছে। আমরা যেসব খাবার খাচ্ছি, সেগুলোও ক্রমে বিষাক্ত হয়ে উঠছে। মাছ, মাংস সবকিছুতেই বিষ মেশানো। বাস্তবে আমরা যেন বিষই খাচ্ছি। আমাদের খাদ্যতালিকায় আসলে নিরাপদ কোনো খাবার নেই।’
বিডি প্রতিদিন/মুসা