ওয়াসিমা ও ওয়াসিফা দুই বোন। ওয়াসিমার বয়স তেরো আর ওয়াসিফার দশ বছর। তারা দুই বোন একসঙ্গে খেলাধুলা করে। ওরা একই স্কুলে পড়ে, আর সবচেয়ে মজার কথা, ওরা সবকিছুতেই একসঙ্গে থাকে। স্কুলের মাঠে যখন দৌড় প্রতিযোগিতা হয়, তখনো দুজনেই দৌড়ে অংশ নেয়। খেলার মাঠ হোক বা বইয়ের পাতায়, ওদের বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা সবার চোখে পড়ে।
এক দিন স্কুলে ঘোষণা এলো-আগামী সপ্তাহে আন্তবিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতা হবে। শিক্ষক বললেন, ‘প্রতিটি শ্রেণি থেকে দুজন করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।’
ওয়াসিমা তো বড়, সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আর ওয়াসিফা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে, দুই শ্রেণিতেই ওরা সেরা ছিল। ফলে দুজনেই আলাদা আলাদা দলে অংশগ্রহণের সুযোগ পেল।
প্রতিযোগিতার দিন। দুই বোন দুটো ভিন্ন টিমে। কুইজের প্রশ্ন কঠিন ছিল, কিন্তু ওয়াসিফার দলের এক বন্ধু ভুল উত্তর দিয়ে বসে। ওয়াসিফা চুপ করে গেল, কারণ সে ভুলটা ধরতে পেরেছিল। আরেকটি প্রশ্ন এলো, ওয়াসিমার দল উত্তর দিয়ে ফেলল-সঠিক উত্তর!
শেষে ওয়াসিমার দল বিজয়ী হলো। সবাই হাততালি দিল। কিন্তু ওয়াসিমা সবার সামনে গিয়ে বলল, ‘আমরা জিতেছি ঠিকই, কিন্তু আজ আমার ছোট বোন ওয়াসিফা যা করেছে, তা আমার কাছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা। সে চাইলেই বন্ধুর ভুলটা শিক্ষকের সামনে বলে দিতে পারত, কিন্তু সে সেটা করেনি। কারণ সে জানে বন্ধুকে ছোট করে দিয়ে জয়ী হওয়া সত্যিকার জয় নয়। ওর ভদ্রতা আর বন্ধুত্বের মানসিকতা আজ আমাকে জিতিয়ে দিয়েছে।’
শিক্ষক মুচকি হেসে বললেন, ‘ওয়াসিমা, তুমি শুধু বিজয়ী নও, তুমি বড় মনের মানুষও। আর ওয়াসিফা, তোমার ব্যবহার আমাদের সবাইকে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের অর্থ শিখিয়ে দিয়েছে।’
দুই বোন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসল। সত্যিকারের জয় তো হৃদয়ে থাকে, ভালোবাসা, সততা আর সম্মানের মাঝে।
নৈতিক শিক্ষা :
বন্ধুত্ব, ভদ্রতা ও সততা-এগুলো জীবনের সবচেয়ে বড় গুণ। সব সময় জেতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কীভাবে খেলি, কীভাবে অন্যকে সম্মান করি, সেটাই মানুষের সত্যিকারের বড়ত্ব।