বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ক্রীড়াই তারুণ্য, ক্রীড়াই শক্তি। জাতির সুস্থতা, জাতির আনন্দ ও গৌরব ক্রীড়াতেই নিহিত। তাই জাতীয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে। সুস্থ দেহ ও মন কাজের প্রতি আগ্রহ এবং কাজের গতি বাড়ায়।
সোমবার রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে জুলাই স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের মেগা ফাইনাল খেলা উদ্বোধনকালে তিনি এসব বলেন। জুলাই ঐক্য পরিষদ এই খেলার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনে প্রথম শহীদ ওয়াসিমের গর্বিত পিতা মো. শফিউল আলম। প্রধান বক্তা ছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) নজরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সারোয়ার আলম, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার, এনসিপি নেতা একরামুল হক, ছাত্র অধিকার পরিষদের রবিউল হাসান তানজিম, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও যুবদল নেতা এম মোর্শেদ হাজারী, মনসুর চৌধুরী, আজম খান,ওসমান তাহের সম্রাট, বেলাল উদ্দিন মুন্না, রিফাত চৌধুরী, মো. মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের প্রয়োজন সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবন। আর এ জন্য খেলাধুলার কোনোই বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। খেলাধুলার জন্য সবার আগে প্রয়োজন খেলার মাঠ। খেলাধুলা চর্চার প্রতি শিশু-কিশোরদের সব সময়ই আগ্রহ থাকে। তারা খেলাধুলা করতে চায়। ভালো পরিবেশে খেলাধুলা করতে পারলে তাদের পড়ালেখার প্রতিও মনোযোগী করে তোলা যায়। একটা সময় ছিল যখন মাঠ বা স্কুল-কলেজের খেলার চত্বর মুখর থাকত। এখন তেমনটি খুব একটা চোখে পড়ে না। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে পুরোনো কিছু স্কুল-কলেজ ছাড়া নতুন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্কুল থাকবে, মাঠ থাকবে না, শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারবে না এটা কি ভাবা যায়? মাঠের অভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার চর্চা নেই, নেই সাংস্কৃতিক পরিবেশ। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কোনোভাবে কাম্য নয়। স্কুলের কার্যক্রম শুধু পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে যেসব চর্চার প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার স্তরগুলোয় খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, তা না হলে বছরে দুই-চারটি টুনার্মেন্টের আয়োজন করা রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শারীরিক শিক্ষার প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা অবহেলিত, উপেক্ষিত, বিশেষ করে কলেজ পর্যায়ে। কলেজ পর্যায়ে শুধু শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলাই অবহেলিত নয়, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকরাও চরমভাবে অবহেলিত। কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি চালুর মাধ্যমে এ বিষয়ের শিক্ষকদের প্রভাষক পদমর্যাদায় উন্নীত করা উচিত।
তিনি বলেন, আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে বর্তমানে আমাদের দেশের স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যেভাবে মোবাইল ফোনে আসক্ত হচ্ছে, তাতে আমাদের সামনে একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ জাতি অপেক্ষা করছে। শিক্ষার্থীরা এখন মাঠে যেতে চায় না। তারা এখন স্ক্রিনেই সময় কাটায় বেশি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের দেশে একদিকে খেলাধুলা এবং শারীরিক শিক্ষা কমছে, অন্যদিকে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানারকম শারীরিক ও মানসিক রোগ বাড়ছে।
ইন্টারনেটের এই যুগে আমরা স্মার্টফোনের গেইম খেলতে খেলতে সত্যিকারের খেলা প্রায় ভুলতেই বসেছি। কিন্তু খেলাধুলা করা দেহের জন্য যেমন দরকারি তেমনি মনের সুস্থতায়ও উপকারী। খেলাধুলা শুধু ছোট বাচ্চাদের জন্য না, বড়দের জন্যও অনেক দরকারি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন