উজানের ঢল ও তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এক রাতেই পানি কমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। প্লাবিত লোকালয় থেকে পানি অনেকটাই নেমে গেছে। এতে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন।
এদিকে বন্যার্ত মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার। তিনি পাঁচটি উপজেলায় ঘুরে ঘুরে বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। অন্যদিকে সদর উপজেলার রাজপুর ও খুলিয়াগাছ এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সে.মি নিচে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে সোমবার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ উপরে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছিলো। হঠাৎ এ বন্যায় সোমবার জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলো। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ত্রিশটি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছিলো।
এক রাতেই পানি নেমে গিয়ে বন্যা পরবর্তীতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। কাচা-পাকা রাস্তা পানির তোড়ে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষত ভেসে উঠেছে। বাড়িঘর ও আশেপাশের পরিবেশ কর্দমাক্ত হয়ে আছে। ফসলি জমিতে এখনো পানি জমে থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ কৃষক।
বিশেষ করে আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর এক মাসের মধ্যেই এসব ধান কাটাই মাড়াই করা যেতো। ইতিমধ্যে অনেক ধান ক্ষেতে শীষ আসাসহ ধান পাকতেও শুরু করেছিলো। এই অবস্থায় পানি জমাট বাধায় এসব ফসল নস্ট হওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছে।
এদিকে পানি কমে যাওয়ায় বানভাসীরা বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। অনেকেই গত রাতেই বাড়িতে ফিরেছেন। গরু ছাগল নিয়ে নতুন করে সাজাতে শুরু করেছেন নিজেদের। বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। ফসলের ক্ষেতে ভেসে আসা জঙ্গল ও পানা পরিষ্কার করছেন।
আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধন এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, আর ২০/২৫ দিন পর ধান পাকা শুরু করত। এক মাসের মধ্যে এসব ধান ঘরে তুলা যেত। হঠাৎ পানি এসে ধানক্ষেত ডুবে আছে। আরও দুয়েকদিন যদি এভাবে থাকে এতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। প্রশাসন বলছে, তালিকা করে বানভাসীদের মাঝে সহায়তা দেওয়া হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। ইতিমধ্যে পানি নেমে গেছে। আগামী ২-৩ দিনে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কোথাও ভাঙ্গণ দেখা দিলে আমরা তা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি।
বিডি প্রতিদিন/এএম