বেশী লাভের আশায় দিনাজপুরে সবজি চাষিরা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ ও ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্বাভাবিকভাবে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজির ফসল ওঠানো হয়। কিন্ত ওই সময় আমদানি বেশি হওয়ায় কৃষকরা অনেক সময় ন্যায্যমূল্য পায় না।
এদিকে বর্তমানে বর্ষার শেষে বাজারে সবজির অপর্যাপ্ততা তৈরি হওয়ায় দামও বেশি, চাহিদাও থাকে বেশি। সবকিছু মাথায় রেখে আগাম সবজি চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা।
বর্তমানে উঁচু জমিগুলোতে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যা করছেন কৃষক। শীতকালীন আগাম সবজির ভালো দাম পাওয়ার আশায় শীতের আগেই যাতে সবজি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারে সেই চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। এতে চাষিরা প্রতিবছরই লাভবান হচ্ছেন। এরই মধ্যে টমেটো-করলা বাজারে বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী, সুন্দরবন, ফাজিলপুর ও আউলিয়াপুর ইউনিয়নে, ফুলবাড়ীর শিবনগর, আলাদীপুর, খয়েরবাড়ী, দৌলতপুরসহ বিভিন্ন এলাকাজুড়ে আবাদ হচ্ছে শিম, মুলা, ফুলকপি, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, করলা, কাকরোল, লাউ, লালশাক, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি আগাম শীতকালীন সবজি। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই আগাম জাতের সবজি চাষ করছেন কৃষক।
নশিপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম (৪০) জানান, চলতি বছরে তার ৪৫ শতক জমিতে তিন ভাগে আগাম জাতের সবজি চাষ শুরু করেছেন। এর মধ্যে আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁঠালি বেগুন ও টমেটো চাষ করেছেন।
শহিদুলের সবজি ক্ষেতে আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো ও মুলা গজিয়েছে। তিনি আশা করছেন, আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার ক্ষেতের সবজি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এ সময় সবজি বাজারজাত করতে পারলে তিনি ভালো দাম পাবেন এবং লাভবান হবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আলাদীপুর ইউপির ছোট ভিমলপুর গ্রামের কৃষক হামিদুল ইসলাম ফুলকপির জমিতে স্প্রে করছেন। এ সময় তিনি জানান, এবার ৩৫ শতাংশ জমিতে আগাম জাতের কপি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কপি বাজারজাত করতে মোট খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ২০-২৫ দিনের মধ্যে বাজারে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি কপির পাশাপাশি শীম ও শসা চাষ করেছেন।
হামিদুল বললেন, ‘গত বছর এই জমিতেই ২ লাখ ২০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেছিলাম। এবারও ভালো কিছু আশা করছি।’
ভিমলপুর গ্রামের সবজি চাষী আলামিন হোসেন বলেন, ‘৮০ শতাংশ জমিতে ফুলকপির চারা রোপন করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো বাজারজাত করতে পারবেন এবং দামও ভালো পাবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, এরইমধ্যে আগাম জাতের শিম, মুলা, লালশাক, পুঁইশাক, করলা, পালংশাক, বরবটি, টমেটো, শসা উঠতে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত দামও পাচ্ছি।’
ফুলবাড়ী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, আগাম সবজি চাষ লাভজনক। যেকোনো সবজি মৌসুমের আগে বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম বেশি পাওয়া যায়। তাই অনেক চাষি আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন। সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন জেলায় যায়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ ও রোগবালাই দূর করার জন্য সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগাম জাতের সবজির লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫০ হেক্টর জমিতে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ টি উপজেলায় ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে আগাম জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও ৩৬ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে এ বছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ