চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রম এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দু’মাস জাটকা রক্ষা অভিযানে সকল প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ৩০ এপ্রিল বুধবার রাত ১২টায়। সেজন্য নদীতে মাছ আহরনের জন্য জেলেরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার নৌ সীমানায় ৪৪ হাজার ৩৫জন নিবন্ধিত জেলেরা ৩০ এপ্রিল বুধবার মধ্যরাতে ইলিশ আহরণ করতে নামবে। তবে জাটকা রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা জেলেরা সফলভাবে বাস্তাবায়ন করেছে। জেলা টাস্কফোর্সের দাবি জাটকা রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
সরেজমিনে সদর উপজেলার আনন্দ বাজার, রনাগোয়াল, দোকানঘর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জাল ও নৌকা মেরামত কাজে জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শাহাজান মাঝী, আনোয়ার মাল বলেন, সরকার জাটকা না ধরার জন্য যে অভিযান দেয় আমরা তা মানি। তবে মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর এলাকার কিছু অসাধু জেলে এসে অধিকাংশ সময় জাটকা ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষে নদীতে নেমে আমরা কোন মাছ পাইনা। আমরা ঋণ করে নতুন জাল ও নৌকা মেরামত করে নদীতে নেমে মাছ না পেলে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আর নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের যে পরিমাণ খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। এখনকার বাজারের যে অবস্থা, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি, সন্তানদের পড়া-লেখার খরচ চালানো আমাদের জন্য অসম্ভব। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার যে অভিযান দেয়, তা আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নৌ পুলিশকে আরো কঠোর হওয়া দরকার। তাহলে কোন জেলেই নদীতে নামতে পারবে না। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে থাকি। আথচ বাহির থেকে অসাধু জেলেরা এসে জাটকা ধরে নিয়ে যায়। এভাবে অভিযান দিলে সরকারের লক্ষ সফল হবে না।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার দু’মাসের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত ছিলো। অভিযানকালে জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে জনপতি ৪০ কেজি করে ৪ কিস্তিতে মোট ১৬০ কেজি চাল সঠিক সময়ে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে ইলিশ সম্পদ রক্ষা প্রকল্প থেকে দ্রুতগামী ১০টি স্পিড বোট বরাদ্ধ থাকায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও জেলা টাস্কফোর্সের অনবরত যৌথ অভিযানে জেলেরা নদীতে নামার তেমন সুযোগ পায়নি। ফলে নদীতে এবার জাটকা তথা ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া অসাধু জেলেদের আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এবারে অভিযানে, ৩৮টি মোবাইল কোর্ট, ৭শ ৯৫টি অভিযান, ১৫ জন জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, প্রায় ১০.৮৯৫ লক্ষ মিটার কারেন্টাজাল জব্দ ও ৬.৪৬৩ মেট্রিক টন জাটকা আটক করে গরিব-দুস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আর জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৫শ ৫ টাকা।
বিডি প্রতিদিন/এএ