ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধে দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, কমপক্ষে ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট, কমপক্ষে ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতে ও রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেট ও খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছে।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম দাঙ্গাপ্রবণ। প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটে এ এলাকায়। এ ইউনিয়নের পুখুরিয়া, ব্রাহ্মণকান্দা, নাজিরপুর ও খাঁ কান্দা নাজিরপুর এ চারগ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন পুখুরিয়া গ্রামের সুলতান মাতুব্বর (৫০) ও অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের ইয়াকুব মিয়া (৫৫)। এ দুপক্ষ মাঝে মাঝে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। গত ১৫ দিন ধরে দুপক্ষের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকে দুই পক্ষের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। শনিবার রাত ১০টার দিকে ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের শতাধিক লোক পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেটের ১২-১৩টি দোকান কুপিয়ে ক্ষতিসাধন করে। এরপর দুই পক্ষের কয়েকশত লোক ঢাল, সড়কি, নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের শত শত লোক ঢাল, সড়কি, রামদা নিয়ে খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামের ইয়াকুব মিয়ার সমর্থকদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে। এ সময় বাড়ির পুরুষেরা পালিয়ে যায়।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামের শাহজাহান সরদারের গরুর ঘর, রান্নাঘর, হায়দার সরদারের দুটি খড়ের গাদা, সাইদুল সরদারের একটি পাটকাঠির গাদা পুরো পুড়ে গিয়েছে। ১০টির অধিক বাড়ি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের চিহ্ন রয়েছে।
বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, সুলতান মাতুব্বরের কয়েকশত সমর্থক ঢাল, সড়কি ও রামদা নিয়ে এসে রবিবার সকালে এ অগ্নিসংযোগ করেছে। এর পাশাপাশি জহুরুল সরদার, নুরা সরদার, সাইদুল সরদার, তাইজেল সরদার, হায়দার সরদার, বক্কার সরদার, রুমি সরদার, ইয়াদ আলী সরদারের বাড়িসহ ১০-১২টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ব্রাহ্মণকান্দা রনি সরদার (১৬) বলে, সকালে কেবল ঘুম থেকে উঠেছি। এখন দেখি মাঠ ও রাস্তা দিয়ে হাজার খানেক লোক আমাদের বাড়ি ঘর ঘিরে ফেলেছে। এরপর এসে বাড়ির থাকার ঘর থেকে টয়লেট পর্যন্ত ভাঙচুর করে। লুটপাট করে টাকা পয়সা, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি পর্যন্ত নিয়ে যায়। মহিলা ও শিশুদের মারধর করে। বৈদ্যুতিক মিটার কুপিয়ে নষ্ট করে রেখে যায়।
এ গ্রামের রুমি সরদারের স্ত্রী বলেন আরবি বেগম (২৫) বলেন, আমাকে মেরেছে। হাতে রামদা দিয়ে কোপ দিয়েছে। আমদের ৫ টি গরু ও ইউপি সদস্য মিলন সরদারের ৫টি গরু লুট করে নিয়ে গিয়েছে।
পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেটের চায়ের দোকানদার মোসলেম মোল্লা (৭০) বলেন, দুই পক্ষের আগে থেকে বিরোধ চলছিল। শনিবার রাতে ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের লোকজন বাজারে এসে সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের লোকজনের ১২-১৩টি দোকান কুপিয়ে যায়। আজ আবার সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের লোকজন ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের লোকজনের বাড়ি ঘরে হামলা করেছে।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে। ডিবি পুলিশের টিমও কাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ