দেশজুড়ে চলছে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষের আনন্দ। দিনটি উপলক্ষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছেন, আবার অনেকে অসুস্থ স্বজন নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও স্বজনরা ভুলেই গেছেন আজ বাঙালির বিশেষ একটি দিন। তবে দিনটি উপলক্ষে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা মিলেছে ব্যতিক্রমধর্মী এক রোগীবান্ধব পরিবেশ।
এদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ও ভর্তি থাকা শতাধিক রোগী, রোগীর স্বজনরা পেয়েছেন পহেলা বৈশাখে ফুলেল শুভেচ্ছা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি শতাধিক রোগী, রোগীর স্বজন, কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া হাসপাতালের পক্ষ থেকে ভর্তি রোগীদের মধ্যে উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করা হয়। এতে হাসপাতালজুড়ে আনন্দঘন পরিবেশে উৎসবে পরিণত হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তি থেকে ভুলেই গেছি আজ পহেলা বৈশাখ। হঠাৎ ফুলের শুভেচ্ছা পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। হাসপাতালে এসে কখনোই এমন আয়োজন দেখেননি বলেও জানান তারা।
ষাটোর্ধ্ব রোকেয়া বেগম বলেন, ‘কখনোই আমাকে কেউ ফুল দেয়নি, এমনকি আমার স্বামীও দেয়নি। গত তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। ভুলেই গিয়েছিলাম আজ পহেলা বৈশাখ। হঠাৎ হাসপাতালের ডাক্তার মামুন এসে সবাইকে ফুল দিয়েছে এতে আমরা খুবই খুশি।’
শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত সেবিকা সেলিনা খাতুন বলেন, ‘১৫ বছরের আমার পেশাগত জীবনে এই প্রথম নববর্ষে ফুলের শুভেচ্ছা পেলাম। রোগীসহ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীদের মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মামুন ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এতে আমরা খুবই খুশি।’
ব্যতিক্রমী নববর্ষ বরণের আয়োজক শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রোগীদের মন অনেক খারাপ থাকে, চিন্তিত থাকে। একজন মানুষ যখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকে তখন তার মনও অনেক দুর্বল থাকে। একটু ভালো কথা, স্বাস্থ্যকর্মীদের একটু উৎসাহ-প্রেরণায় রোগীরা মনের দিক দিয়ে অনেক সুস্থ হবেন। যে কারণে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস, আমি চেয়েছি নববর্ষের এই দিনে ফুল পেয়ে রোগীদের মন যেন ভালো হয়, তারা যাতে দ্রুত সুস্থ হতে পারে তাই এরকম ব্যতিক্রম ধর্মী উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে একটা সংস্কার আনতে গেলে একদিনে সম্ভব না, নিয়মিতভাবে একটি টিমওয়ার্কের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি এখানে আরএমও হিসেবে গত ৪ মাস যোগদান করেছি। যোগদানের পর থেকে হাসপাতালে বেড সংকট সংযোজন, সপ্তাহে একদিন সিজার অপারেশনের ব্যবস্থা করেছি। গাইনি কনস্যালট্যান্ট পদে নিয়োগ হলেও শৈলকুপায় যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি এখানে আসেননি। ফলে আমি নিজেই সিজার অপারেশন করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। প্রতিদিন রোগীর প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়। জনবল বাড়ালে মানুষ আরো ভালো সেবা পাবে।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল