নিরানন্দে কাটছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারগুলোর ঈদ। লক্ষ্মীপুরের শহীদ সাব্বির, ওসমান, আফনান ও কাউসারদের পরিবারে আজও চলছে আর্তনাদ। বাড়িজুড়ে শুধুই নিস্তব্ধতা। অন্য ঈদের মতো এবার তারা (শহীদ) ফিরছে না আর বাড়ি, ঈদের সালামি নিতেও আসেনি। বুকভরা কষ্ট নিয়ে খুনিদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
ঈদের দিন সরেজমিন একাধিক শহীদ পরিবারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে নিস্তব্ধতা আর কান্নার আওয়াজ। সাধারণত ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি, সালাম দেয়া আর সালামি নেয়া, কিন্তু সেই ঈদ কখনো কখনো কারো জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠে না। তেমনি জুলাই আন্দোলনে নিহত পরিবারগুলোর কাছেও এবার সেই খুশির ঈদ হয়নি। প্রিয়জন হারিয়ে তাদের বুকভরা কষ্ট আর আর্তনাদের মধ্য দিয়ে এবার নিরানন্দে কাটছে এসব পরিবারের ঈদ। এমনি এক পরিবার লক্ষ্মীপুরের শহীদ সাব্বিরের পরিবার। এবার ফেরা হয়নি তার বাড়ি, নেয়া হয়নি সালামী, বাড়িজুড়ে নিস্তব্ধতা আর মা-বাবার চোখের জ্বলে ভাসছে সন্তানের স্মৃতিময় নানা জীবনকাহিনী। তাইতো কবরের পাশে গিয়ে দোয়া ও মোনাজাত করছেন স্বজনরা।
এ সময় শহীদ সাব্বিরের বাবা আমীর হোসেন ও মা মায়া বেগম এর সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। তার বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গেলো বছর ছেলেকে দুই হাজার টাকা দিয়েছিলাম, ঈদের পোশাক কিনে এনে তার মাকে দেখিয়েছে, এবার ঈদে আমার ছেলে নেই এটি মানতে পারছি না, কিভাবে কাটছে ঈদ, সেই ঈদ আমাদের আর উপভোগ্য নয়। তবে সন্তান হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
একইভাবে সাব্বিরের মা মায়া বেগম বলেন, আমার ছেলে এবার ঈদে আম্মু বলে ডাকেনি, সালামীও নেয়নি। ২২ বছর এভাবেই চলতো এখন আর সে পৃথিবীতে নেই, ঈদ আনন্দ ছেলে হারানোর সাথে হারিয়ে ফেলেছি। তবে ছেলের খুনিদের ফাঁসি দাবি করছি।
এদিকে শুধু বাবা-মা-তাদের সন্তান হারায়নি সহপাঠীও হারিয়েছেন কেউ কেউ। তাতে শুন্যতাও কষ্টে ঈদ কাটাচ্ছেন বলে জানান কবরের পাশে আসা শহীদ সাব্বিরের একাধিক বন্ধু। আর খুনিদের বিচারের দাবি জানান তারাও।
একইভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদ ওসমান, আফনান, কাউছার পরিবারেও এবার ঈদ আনন্দ নেই।
শহীদ ওসমানের ভাই ও মা বলেন, শত্রুরা কেড়ে নিয়েছে আমাদের ঈদ আনন্দ। ওসমানকে হারিয়ে আমরা জিন্দা লাশের মতো হয়ে আছি। একই বক্তব্য অন্য শহীদ পরিবারেরও।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট জুলাই আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে নিহত হন সাব্বির, ওসমান, আফনান, কাউছারসহ ১২ জন। এসব ঘটনায় তাহের পুত্র যুবলীগ নেতা সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান আসামি করে একাধিক মামলা করা হয়। এরপর থেকে আত্মগোপন চলে যান টিপু। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকে গা ঢাকা দেন আবার একাধিক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ