বগুড়া পৌরসভার অধিকাংশ সড়ক খানাখন্দে ভরা। ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নাজুক। একটু বৃষ্টিতেই মূল সড়কে পানি জমে। দিনদিন বেড়ে চলেছে জনদুর্ভোগ। কাঙ্ক্ষিত সেবাবঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। বগুড়া পৌরসভার আয়তন ও জনসংখ্যা বাড়লেও নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভা কাগজেকলমে প্রথম শ্রেণির হলেও উন্নয়ন নেই বললেই চলে। ১ হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ৭২৯ কিলোমিটার পাকা। বাকি ৬১৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৫০ কিলোমিটার পুরোপুরি কাঁচা। আরসিসি ঢালাই ও ইট বিছিয়ে ২৬৯ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। পাকা সড়কের অধিকাংশই এখন ক্ষতবিক্ষত। ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া পৌরসভার আয়তন পাঁচগুণ বাড়িয়ে ৭০ বর্গকিলোমিটার করা হয় ২০০৬ সালে। ১২টি ওয়ার্ড থেকে বাড়িয়ে করা হয় ২১টি। সাড়ে ৭ লাখ নাগরিকের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বসবাস করেন মূল শহরে ১-১২ নম্বর ওয়ার্ডে। বর্ধিত ১৩-২১ নম্বর ওয়ার্ডে বাস করেন বাকি ৩ লাখ। কর্মকর্তারা জানান, কাঁচা ও ইট বিছানো সব সড়কই বর্ধিত এলাকায়। পৌরসভার মোট সড়কের ২১ শতাংশ এখনো কাঁচা। ৫৬ বর্গকিলোমিটার বর্ধিত এলাকায় নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বগুড়া শহরের কৈগাড়ী এলাকার বসুন্ধরা সড়ক, নারুলী দক্ষিণপাড়া, দক্ষিণ ধাওয়াপাড়াসহ প্রায় সড়কেই রয়েছে খানাখন্দ। বিশেষ করে বসুন্ধরা সড়কটিতে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষের কষ্টে চলাফেরা করতে হয়। অন্যান্য সড়কেও জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। শহরের গোহাইল রোড, টিনপট্টি, দত্তবাড়ী, উত্তর চেলোপাড়া, সেউজগাড়ী, হাড্ডিপট্টি-বাদুড়তলা, জহুরুলনগর, কামারগাড়ি-হাড্ডিপট্টিসহ ছোটবড় সড়কগুলোর বেহালদশা। এসব সড়কের পাশের ড্রেনও নষ্ট। চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারীরা, যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকরা। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাজু জানান, এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেন উপচে পানি জমে সড়কে। ভাঙা রাস্তায় যান চলাচলেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দ্রুত সড়ক ও ড্রেন সংস্কার জরুরি। একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রোস্তম আলী বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে জনপ্রতিনিধি না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে সড়ক ও ড্রেন সংস্কার, এলাকার উন্নয়ন এবং জনদুর্ভোগসহ সব সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারতেন। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্ধিত এলাকার ২১ শতাংশ সড়ক পাকাকরণ, বাতি সংযোজন ও নালা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ১ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। সরকারি অনুদান ছাড়া ব্যয় বহন সম্ভব নয়। পৌরসভা সিটি করপোরেশন করার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়। সিটি করপোরেশন হবে, এমন আশায় এবার বাজেটও ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পৌর প্রশাসক মাসুম আলী বেগ বলেন, বগুড়া পৌরসভা দ্রুত সিটি করপোরেশনের ঘোষণা আসবে। তখন বর্ধিত এলাকার উন্নয়ন সমানভাবে হবে। সিটি করপোরেশন হবে এমন আশায় এবার আগের চেয়ে বেশি বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ বাজেটের মাধ্যমে বগুড়া পৌরবাসীর সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।