গোপালগঞ্জ পৌর এলাকার কারারগাতি ৯৬ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ স্কুলে যাতায়াতের পথে ৩০০ মিটারে নেই কোনো সড়ক। বর্ষা মৌসুমে সেখানে অন্তত চার মাস থাকে জলাবদ্ধতা। তখন বিদ্যালয়ে যাতায়াতে ভোগান্তির শেষ থাকে না শতাধিক খুদে শিক্ষার্থীর। বর্ষার শুরু থেকেই হাঁটুসমান কাদাপানি মাড়িয়ে স্কুলে যেতে হয় শিশুদের। কখনো কেউ কেউ হয়ে যায় কাকভেজা। অনেকে বাবা-মায়ের কোলে ও পিঠে চড়ে পার হয় স্থানটি। পানি বাড়লে ডিঙ্গি নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। কয়েকবার নৌকা ডুবে শিশুদের বই-খাতা, ব্যাগ, জামা-প্যান্ট ভিজে গেছে। বর্ষাকালে স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি যেমন কমে তেমনি ব্যাঘাত ঘটে পড়াশোনায়। পঞ্চম শ্রেণির বৃষ্টি কির্ত্তনীয়া, রাত্রী মজুমদার জানায়, স্কুলে যাতায়াতের সময় প্রায়ই কাদায় পড়ে যায় তারা। কোনো সময় অর্ধেক প্যান্ট ভিজে যায়, অর্ধেক শুকনো থাকে। আধা ভিজা প্যান্টেই ক্লাস করতে হয়। গর্তে পা পড়ে ব্যথা পাই। ব্যাগ, ড্রেস ও বই ভিজে যায়। ঝড়-বৃষ্টি হলে স্কুলে যাওয়া হয় না।
ডিঙ্গি নৌকার মাঝি অমিত রায় বলেন, এখন পানি বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা হেঁটে পার হতে পারছে না। শিশুদের নৌকায় পারাপার করছি। শিশুরা ওঠার পর নৌকা দুলতে থাকে। কখনো নৌকা উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সাঁতার না জানা শিক্ষার্থী থাকলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রধান শিক্ষক হিরু কামরুন্নাহার জানান, বিদ্যালয়ের ২১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৭৬ জন বর্ষায় পানি মাড়িয়ে স্কুলে আসে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের দুর্ভোগ নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকি। রাস্তাটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জ্যোৎস্না খাতুন বলেন, গোপালগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। গোপালগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, যে স্থানে রাস্তা নির্মাণ করার দাবি করা হচ্ছে, সেখানে জমির মালিকরা জায়গা দিতে চাচ্ছে না। ফলে রাস্তা তৈরি করতে বিলম্ব হচ্ছে। জায়গার বিষয়টি সমাধান হলে, দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা করে দেওয়া হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলা সদরের পুলিশ লাইনসের পরে ফিলিং স্টেশন থেকে উত্তর দিকে একটি পাকা রাস্তা পোদ্দারবাড়ি পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে। পুলিশ লাইনসের ট্রাফিক বক্স থেকে আরেকটি পাকা সড়ক গেছে সর্বজনীন হরি মন্দির পর্যন্ত। এ সড়কের মাঝের ৩০০ মিটারে মাটি নেই। শুকনো মৌসুমে ধান খেতের আল দিয়ে চলাচল করেন বাসিন্দারা। বর্ষায় শুরু হয় ভোগান্তি।