টাঙ্গাইলের যমুনা নদীসংলগ্ন ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন থেকে জেলার মির্জাপুর পর্যন্ত ৪৬টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৩০টিই অরক্ষিত। এসব ক্রসিং পরিণত হয়েছে মারণফাঁদে। প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে গেটম্যান না থাকায় ভয়-আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করে মানুষ। রেল পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ইব্রাহিমাবাদ-মির্জাপুর অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২, ফেব্রুয়ারিতে ২, মার্চে ১, এপ্রিলে ১, মে মাসে ২, জুনে ৪ এবং ২৫ জুলাই পর্যন্ত মারা গেছেন তিনজন। এদের বেশির ভাগেরই ক্রসিং পারাপার এবং রেললাইনে হাঁটার সময় সাবধানতার ঘাটতি ছিল। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে কালিহাতীর আনালিয়াবাড়ি এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে বাবা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনাটি দেশে আলোড়ন তুলে। ওই জেলায় বছরের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২৩ জনে। ২০২৩ সালে টাঙ্গাইলে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান ৪০ জন। টেঙ্গুরিয়াপাড়ায় অরক্ষিত ক্রসিংয়ের পাশের দোকানি আবদুল ওয়ারেছ মিয়া জানান, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার যানবাহন এই ক্রসিং পার হয়। দুই প্রান্তের সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা পারাপার হয়ে থাকে। তিনি এখানে পাঁচ বছর ধরে দোকান করছেন। প্রায়ই দোকান ফেলে জনস্বার্থে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। টেঙ্গুরিয়াপাড়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মেহেদী হাসান জানান, অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা আতঙ্কিত থাকেন।
রেললাইনের কর্মচারী রুবেল মিয়া জানান, বাসাইলের টেঙ্গুরিয়াপাড়া থেকে ৬ কিলোমিটার এলাকা তিনি রেললাইনের দেখভাল করেন। তার দায়িত্বে থাকা এই অংশে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এগুলো বাসাইলের টেঙ্গুরিয়াপাড়া, পাটখাকুরি ও সোনালিয়ায় অবস্থিত। মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া রেলস্টেশনের সহকারী মাস্টার রকিবুল হাসান জানান, ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত ৩০টি অরক্ষিত ক্রসিং রয়েছে। এখানে দ্রুত ডাবল লাইনের কাজ হবে বলে আশা করছেন তিনি। ডাবল লাইন হলে অরক্ষিত সব ক্রসিং রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আসবে। ঘারিন্দা রেলস্টেশনের সহকারী মাস্টার তৌহিদুর রহমান জানান, ইব্রাহিমাবাদ থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত যেসব অরক্ষিত ক্রসিং রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে দ্রুতই রেল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের যমুনা নদীসংলগ্ন কালিহাতী উপজেলার ইব্রাহিমাবাদ থেকে সদর উপজেলার ঘারিন্দা রেলস্টেশন পর্যন্ত ১৯টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি অরক্ষিত ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। সদর উপজেলার ঘারিন্দা থেকে মির্জাপুরের মহেড়া পর্যন্ত ১৮টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ১২টিই অরক্ষিত। এ ছাড়া মহেড়া থেকে মির্জাপুর উপজেলা রেলস্টেশন পর্যন্ত ৯টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অরক্ষিত ৫টি। এতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বাড়ছে।