গাইবান্ধার চরাঞ্চলে রাস্তাঘাট না থাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী বেষ্টিত এ জেলায় ১৬৫টি চর-দ্বীপচরের বাসিন্দাদের বালুময় পথে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলাচল করতে হয়। এসব চরের প্রায় ৪ লাখ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ঘাড়ে করে আনা-নেওয়া করতে হয়। বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত ও কৃষি পণ্য পরিবহনে একমাত্র বাহন হিসেবে শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি আর বর্ষায় নৌকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি চার উপজেলার কামারজানি, চন্জিপুর, ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি, উড়িয়া ও গজারিয়া ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের খাটিয়ামারি, জিগাবাড়ি, পেপুলিয়া, গাবগাছি, গলনা, জিয়াডাঙ্গা, সাতারকান্দি, রসূলপুর, খাটিয়ামারি, ফুলছড়ি, টেংরাকান্দি, চর উত্তর খোলাবাড়ি, বাজে ফুলছড়ি, চর কালাসোনাসহ ১৬৫টি চর-দ্বীপচর এলাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ কারণে চরের প্রায় ৪ লাখ মানুষ বাধ্য হয়ে বালুময় পথে মাইলের পর মাইল হেঁটে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত ও উৎপাদিত কৃষি পণ্য ঘাড়ে করে আনা-নেওয়া করে। এসব চরাঞ্চলের মানুষের উৎপাদিত ফসল জমি থেকে তুলে বাড়ি ও বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির জন্য একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। রাস্তাঘাট না থাকায় ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো এসব এলাকায় চলাচল করতে পারে না। স্থানীয়রা জানায়, পানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র এখন অনেকটা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষের যাতায়াত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ঘোড়ার গাড়িতে বহন করতে হয়। এতে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে। ব্রহ্মপুত্রের চরে ফুলছড়ি ঘাট এলাকায় কঞ্চিপাড়া গ্রামের ঘোড়ার গাড়িচালক ছাত্তার মিয়া (৪৮) বলেন, ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন আয় করি ৬০০-৮০০ টাকা। ঘোড়ার খাওয়ার জন্য প্রতিদিন খরচ হয় ২০০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালাই। তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় চার-পাঁচ মাস চলে ঘোড়ার গাড়ি। মে মাসের মাঝামাঝি ব্রহ্মপুত্রে বন্যার পানি এলে বন্ধ হয়ে যায় গোড়ার গাড়ি। তখন থেকে নৌকায় চলাচল করতে হয়।
ঘোড়ার গাড়িতে কৃষি পণ্য নিয়ে আসছিলেন হরিচন্ডি চরের মতিন ম ল। তিনি বলেন, চরে তো কোনো রাস্তা-ঘাট নেই। কৃষি পণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ির কোনো বিকল্প নেই। ঘোড়ার গাড়ি একমাত্র ভরসা চরাঞ্চলের মানুষের।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জগৎ বন্ধু মণ্ডল বলেন, ডিসেম্বর থেকে মে মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রমত্ত তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে গিয়ে বিশাল চর জেগে ওঠে। এ সময় নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চরের মানুষের কাছে ঘোড়ার গাড়ি যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে।