ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কসংলগ্ন রাজশাহীর পবা উপজেলায় বিসিক শিল্পপার্ক-২। ৫০ একর জমিতে গড়ে ওঠা বিসিক-২ প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ১৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ২৮৬টি শিল্প প্লট আছে। এর মাধ্যমে ১০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু তিন বছর পর চলতি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাত্র ৪৯টি প্লট বরাদ্দ হয়েছে। তবে শিল্প কার্যক্রম শুরু হয়েছে মাত্র ৩টি প্লটে। বরাদ্দ পাওয়া প্লটগুলোর বেশির ভাগই পড়ে আছে ফাঁকা। সেখানে গজিয়ে উঠেছে কাশবন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্লটের অতিরিক্ত দাম, ইউটিলিটি সেবার অনুপস্থিতি ও ব্যাংকিং সহায়তার অভাবে এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তিন বছরে মাত্র তিনটি প্লটে শিল্প কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকিগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিসিক-২ প্রধান ফটক পেরিয়েই রাখা হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্লট। সেখানে কোনো কার্যক্রম নেই। একটু সামনে এগোতেই দেখা মিলছে সারি সারি কাশবন। প্রতিটি প্লটেই ফুটেছে ফুল। নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য। বেশির ভাগ প্লট কীটনাশক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এখানে কোনো কমন ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) নেই। এতে বিপজ্জনক বর্জ্য খোলা ড্রেনে ফেলা হলে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।
রাজশাহীর উষা সিল্ক প্রিন্টিং ও উইভিং ফ্যাক্টরি ২০২৪ সালে প্লট চেয়ে আবেদন করেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান অপু বলেন, ‘প্রকল্পের শুরুতে আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু বাস্তবতা প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি। তাই আমরা আর সেখানে যাইনি।’ ট্রিপল এস ইলেকট্রনিকসের ব্যবস্থাপক মো. নাসিম জানান, প্রায় এক বছর আগে প্লট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলেও এখনো পাননি। তিনি বলেন, প্রকল্পে বিদ্যুৎ-সংযোগ সম্প্রতি এসেছে। কিন্তু গ্যাস ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা এখনো হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। বিসিক-২-এর প্লটের মূল্য প্রতি বর্গফুট ১ হাজার ১৪৮.২৭ টাকা। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু দাবি করেন, এটি বাজারদরের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি। প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য যে পরিমাণ পুঁজি দরকার, তা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না। ব্যাংকগুলোও এ প্রকল্পে ঋণ দিতে অনিচ্ছুক। ফলে এখানে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ প্লট কীটনাশক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এখানে কোনো কমন ইটিপি নেই। এতে বিপজ্জনক বর্জ্য খোলা ড্রেনে ফেলা হলে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।
রাজশাহী বিভাগীয় নারী উদ্যোক্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য যে পরিমাণ পুঁজি দরকার, তা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না। ব্যাংকগুলোও এ প্রকল্পে ঋণ দিতে অনিচ্ছুক। ফলে এখানে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।