ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। বিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষের কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য যে কোনো দণ্ডে তাঁকে দণ্ডিত করা হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া এ বিধিমালায় মোট ১৭টি অনুচ্ছেদ রয়েছে এবং ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদেই বিধি লঙ্ঘনের এসব শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে গঠিত আচরণবিধিসংক্রান্ত কমিটির প্রস্তুত করা এ বিধিমালায় প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদের আবার একাধিক উপধারাও রয়েছে। এ বিধিমালায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল নিয়ে বলা হয়, প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা দাখিল করতে পারবে না। এ সময় কোনো প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। এ ছাড়া এ সময় অন্য কেউ কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। যানবাহন ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, মনোনয়নপত্র জমাদান-প্রত্যাহার বা নির্বাচনি প্রচারণায় কোনো ধরনের যানবাহন নিয়ে শোভাযাত্রা, শোভাযাত্রা বা মিছিল করা যাবে না। নির্বাচনের দিন শুধু অনুমোদিত যানবাহন (স্টিকারযুক্ত গাড়ি) নির্বাচনি এলাকায় চলাচল করতে পারবে। প্রার্থী ও ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসার জন্য কেবল বাইসাইকেল ও রিকশা ব্যবহার করতে পারবেন।
নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে বলা হয়, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত প্রচার করা যাবে। প্রতিদিন প্রচারের সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। শুধু ক্যাম্পাস এলাকায় সভা, সমাবেশ ও অডিটরিয়ামে রাত ১০টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে। ভোটার বা প্রার্থী ব্যতীত অন্য কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবেন না।
নির্বাচনি সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিয়ে বলা হয়, কোনো প্রার্থী সভা-সমাবেশ করতে চাইলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। একজন প্রার্থী বা একটি প্যানেলের পক্ষে প্রতিটি হলে একটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি প্রজেকশন মিটিং করা যাবে। কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো ছাত্রসংগঠন হলের অভ্যন্তরে বা ক্যাম্পাসে অনুমোদিত স্থান ব্যতীত কোনো সভা, সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করতে পারবে না। ক্যাম্পাসে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে কিংবা একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, এমন সভা-সমাবেশ করা যাবে না।
পোস্টার ও লিফলেট বিধি নিয়ে বলা হয়, পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিলে কোনো প্রার্থী নিজের সাদা-কালো ছবি ব্যতীত অন্য কারও ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার স্থাপনা, দেয়াল, যানবাহন, বেড়া, গাছপালা, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না। এ ছাড়া কালি, চুন বা কেমিক্যাল দ্বারা দেয়াল বা যানবাহনে কোনো লেখন, মুদ্রণ, ছাপচিত্র বা চিত্রাঙ্কন করে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারবে না।
ভোটারদের উপঢৌকন প্রদান এবং খাদ্য পরিবেশন নিয়ে বলা হয়, কোনো প্রার্থী কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা, অনুদান, আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি করতে পারবে না। নির্বাচনি প্রচার চলাকালে ও নির্বাচনের দিন ভোটারদের কোনো পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন করা যাবে না। এ ছাড়া ভোটারদের কোনোরূপ উপঢৌকন বা বকশিশ ইত্যাদি প্রদান করা যাবে না।
ছেলে প্রার্থীদের মেয়েদের হলে প্রবেশ এবং মেয়ে প্রার্থীদের ছেলেদের হলে প্রবেশ নিয়ে বলা হয়, নির্বাচনি প্রচারণার উদ্দেশ্যে ছেলে প্রার্থীরা মেয়েদের হলে ও মেয়ে প্রার্থীরা ছেলেদের হলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে শুধু প্রজেকশন সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে পারবে।
ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে বলা হয়, ভোটাররা হলের বৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের পর মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ রাখতে হবে। চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয়পত্র দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ছবি তুলতে পারবেন। তবে ভোট কেন্দ্রের বুথসমূহে প্রবেশ করতে পারবেন না। বুথ ব্যতীত ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে লাইভ সম্প্রচার চালাতে পারবেন। উল্লেখ্য, একই সঙ্গে একই সময় টিভি চ্যানেলের দুজন এবং সংবাদমাধ্যমকর্মীদের একজন ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।
নির্বাচনের দিন ভোটার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত ক্যাম্পাসে অন্য সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনি প্রচারণা ও নির্বাচন চলাকালে বিস্ফোরক, দেশি অস্ত্র (লাঠিসোঁটা, রড, হকিস্টিক, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি) ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।