সপ্তাহের প্রায় সবদিনই যানজটে অতিষ্ট থাকে রাজধানী ঢাকার মানুষ। তবে ঈদের ছুটিতে রাজধানীর চিত্র একদমই আলাদা। যান্ত্রিক কোলাহলে ভরা শহরটি এখন একেবারেই শান্ত ও নীরব। এই ফাঁকা ঢাকায় ঈদের প্রশান্তি যেন এক চেনা-অচেনা আবেশ। ঈদের ছুটিতে এমনই ফাঁকা এক রাজধানী দেখছেন ঢাকায় রয়ে যাওয়া মানুষজন। তারা বলছেন, সব সময় এমন ঢাকা হলে পুরো পরিবেশটাই পাল্টে যেতো। ঢাকা হয়ে উঠতো সত্যিকারের বাসযোগ্য শহর।
মঙ্গলবার ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন সকালে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ছিল না স্বাভাবিক দিনের যানজট, হর্নের কর্কশ শব্দও অনুপস্থিত। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। অলস দুপুরে ফাঁকা রাস্তায় হালকা বাতাসের সঙ্গে খেলা করছিল রোদের ছায়া। বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। কর্মজীবী অনেকেরই ফেরার জন্য আজই গ্রাম থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
ঈদে যারা ঢাকায় থেকে গেছেন, তাদের অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়েছেন নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। কেউ কেউ রিকশায় চড়ে, কিংবা খোলা সড়কে হেঁটে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাছেন।
বিশেষ করে ফাঁকা ঢাকায় পরিবার নিয়ে ঈদ উদযাপনে জাতীয় জাদুঘর, মিরপুর চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, জিয়া উদ্যান, শ্যামলী ওয়ান্ডারল্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানীয় পার্ক মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে ঘুরতে এসেছেন কাছের রেস্টুরেন্টে। কেউ কেউ বের হয়েছেন সিনেমা দেখতে। এছাড়া এবছর এলাকায় এলাকায় মাঠগুলোতে বসেছে অস্থায়ী ঈদ মেলা। চীন মৈত্রী সম্মেলনে উত্তর সিটি কর্পোরেশনও দুদিনব্যাপি ঈদ মেলার আয়োজন করেছে।
রাজিয়া সুলতানা নামের এক কর্মজীবী নারী জানান, চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকতে হয়। সড়কে অন্যান্য সময় এতো যানজট থাকে যে তখন মনে হয় অন্য কোথাও সুযোগ থাকলে চলে যাই। কিন্তু ঈদের ছুটিতে একটু শান্তি মেলে। এমন ঢাকা থাকলে আমাদের মতো কর্মজীবী মানুষের জীবন অনেক সহজ হতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঈদের সময় ঢাকার ফাঁকা রাস্তাগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর এক দারুণ সুযোগ পাওয়া যায়। গতকালও ঈদের নামাজের পর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে করে পুরো শহরটা উপভোগ করেছি। খুব ভালো লেগেছে।
তবে মানুষের সংখ্যা কম থাকায় আয়ে টান পড়েছে বলে জানান রিকশাচালক মোহাম্মদ আরিফ। তিনি বলেন, যাত্রী কম, তাই আয়-রোজগারও কমে গেছে। তবে ভালো দিক হলো, কোনো জ্যাম নেই, রাস্তায় রিকশা চালানো সহজ লাগছে।
সায়েন্সল্যাবে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা চালক লোকমান বলেন, সদরঘাট যাওয়ার সময় গুলিস্তান এবং বাবুবাজার এলাকায় কিছুটা যানজট পেয়েছি। এছাড়া বাকি রাস্তা ফাঁকাই ছিল। আসার সময়ও গুলিস্তানে কিছুটা যানজট ছিল। এছাড়া পুরো রাস্তা এখন ফাঁকা।
অন্যদিকে, সড়ক ফাঁকা থাকায় ট্রাফিক পুলিশদেরও দায়িত্ব পালনেও চাপ কম পোহাতে হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিতে দেখা গেছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি- এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমকে জানান, সাইবার মনিটরিংসহ গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঈদ আয়োজনকে নির্বিঘ্নে করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার সবমিলিয়ে টানা ৯ দিনের লম্বা ছুটি ভোগ করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সে অনুযায়ী, ছুটি শেষে আগামী ৬ এপ্রিল খুলবে অফিস-আদালত। তার আগ পর্যন্ত ঢাকা কিছুটা ফাঁকা থাকার সম্ভাবনাই রয়েছে। তবে অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ৬ এপ্রিলের আগেই খুলবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত