ক্যাম্পাসের পুকুর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। সাঁতার জানা সত্ত্বেও পুকুরে ডুবে মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সামনে প্রথম জানাজা শেষে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তদন্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে বেলা দেড়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। টাঙ্গাইল জেলায় গ্রামের বাড়িতে বাদ মাগরিব দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক গফূর গাজীকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক আব্দুল বারী ও অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে সদস্য করা হয়েছে।ে
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে সাজিদের লাশটি পুকুরের মধ্যখানে ভেসে উঠতে দেখেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে অনেকে এটি ময়লা মনে করে গুরুত্ব দেননি। পরে বিকাল ৫টার দিকে লাশটি কিনারে আসতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালে বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে পুকুর মরদেহটি তোলা হয়।
তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। সাজিদের মৃত্যুকে রহস্যজনক উল্লেখ করে সাজিদের ঘনিষ্ঠ বড় ভাই আসাদ বলেন, ‘পানিতে ডুবে মারা গেলে সাধারণত আমরা দেখি তার লাশ উপুড় হয়ে থাকে, কিন্তু সাজিদের মরদেহ ছিল চিত হয়ে। এছাড়া পানিতে ডুবে কেউ মারা গেলে তার পেটসহ শরীর ফুলে যায়। কিন্তু সাজিদের শরীরে আমরা তেমন কোন লক্ষণ দেখিনি। এজন্য এই মৃত্যুকে আমরা রহস্যজনক মনে করছি।’
সাজিদের বন্ধু ইনসান বলেন, ‘সে এভাবে নিজে থেকে মরতে পারে না। এর পেছনে অন্য কিছু ঘটতে পারে। দ্রুত এর সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। আমরা শোক প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’
সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ এসেছিলেন কুষ্টিয়ায় ছেলের জানাজায়। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যু রহস্যজনক। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
সুরতহাল প্রতিবেদনের বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হোসেন ইমাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তার শরীরে অপমৃত্যুর কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর আমরা নিশ্চিত বলতে পারবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। সাজিদের পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে। সবকিছুর প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারব।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে সাজিদের মরদেহ পুকুরে ভাসতে দেখেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। পরে ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী ইবি থানার পুলিশ এসে সাড়ে ছয়টার দিকে সাজিদের দেহ উদ্ধার করে ক্যাম্পাসের মেডিকেলে নেওয়া হয়। তার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল