এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলন। সংগঠনটির আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিম ও সদস্য সচিব রুস্তম আলী খোকন এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ১২ জুলাই পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে অন্তত ১৬ জন শিক্ষার্থী, যা সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আরও ৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নেতৃবৃন্দ মনে করেন, এই প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং তা সরাসরি ফলাফল প্রকাশ ও শিক্ষা ব্যবস্থার চাপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর ভালো ফলাফলের জন্য যে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে, তা আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ। শিক্ষার্থীদের মনে ‘ভালো ফল না করলে উন্নত জীবন পাওয়া যাবে না’ এমন ভয়ানক ধারণা গেঁথে দেয়া হয়। ফলাফল খারাপ হলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যর্থ ও অপ্রয়োজনীয় ভাবতে শুরু করে, যা অনেক সময় তাদেরকে আত্মহননের মতো চরম সিদ্ধান্তে নিয়ে যায়।
নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামী অক্টোবরে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরও এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে, যেমনটি বিগত বছরগুলোতেও দেখা গেছে।
তারা বলেন, বিভিন্ন সময় গ্রেডিং পদ্ধতি পরিবর্তন করা হলেও শিক্ষার্থীদের ওপর ফলাফলের চাপ কমেনি, বরং তা বেড়েছে। কোচিং সেন্টার, অতিরিক্ত টিউশনি এবং সামাজিক প্রত্যাশা সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফলাফল ঘোষণার সময় সংবাদমাধ্যম ও সমাজের বিভিন্ন পক্ষ শুধু ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে এক ধরনের বৈষম্যমূলক পরিবেশ তৈরি করে। এতে কম ফল করা বা অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যর্থ ভেবে হতাশায় ভোগে, অনেকেই পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, কেউ কেউ অপরাধ প্রবণতার দিকেও ঝুঁকে পড়ে।
জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলন পরীক্ষাপদ্ধতি ও ফল প্রকাশের সময় শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে সংগঠনটি।
বিডি প্রতিদিন/মুসা