জেলার অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেনী সরকারি কলেজ। প্রতিবছর মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে প্রায় মাসব্যাপী একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত থাকে কলেজটির উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের।
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও দেখা যাবে একই চিত্র। জেলার বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষার্থীরা এখানে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকারি ছুটি ও পাবলিক পরীক্ষার কারণে কলেজের ক্লাস বন্ধ থাকায় তাদের পাঠ্যসূচি ব্যাহত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসারে ক্লাস ও পরীক্ষা পরিচালনা করা হলেও এসএসসি পরীক্ষার কারণে তা বিঘ্নিত হয়, যা কোর্স সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
ফেনী কলেজের শিক্ষার্থী সায়েম হোসেন বলেন, আমাদের কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের হলেও এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সারা বছর নানা উপলক্ষে ক্লাস বন্ধ থাকার পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষার জন্য এক মাস বন্ধ থাকায় আমাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
শিহাব উদ্দিন নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার কারণে কলেজ বন্ধ রাখা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এখানে পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্র থাকলেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় কলেজে। এমনিতেই কলেজে নিয়মিত ক্লাস হয় না, তার ওপর এসব পরীক্ষা। এরপর পবিত্র রমজান ও ঈদের বন্ধ মিলিয়ে দীর্ঘ সময় কলেজ কার্যক্রম ব্যাহত হবে। ফলে ক্লাস হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ফেনী সরকারি কলেজ ব্যবহারের বিকল্প আপাতত নেই। পর্যাপ্ত সুবিধা থাকায় এই কলেজকে কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া দুঃখজনক।
এই বিষয়ে ফেনী কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ফরিদ আলম বলেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। পাবলিক পরীক্ষা সাধারণত সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়, পাশাপাশি কলেজ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ফলে ক্লাস পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে পরীক্ষা না থাকার দিনগুলোতে ক্লাস নেওয়া হবে এবং বিকালে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে, কারণ এতে কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার কারণে ২৫ থেকে ৩০ দিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। তবে অবকাঠামোগত সমস্যা এবং জায়গার অভাবের কারণে কিছু করার উপায় নেই। অধ্যক্ষ আরো বলেন, প্রশাসনের উচিত এই বিষয়টিতে নজর দেওয়া। মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষার কারণে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক এবং ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পাইলট হাই স্কুলের লাল ভবনটি সংস্কার করা হলে, তারা শিক্ষার্থীদের সেখানে স্থান দিতে পারবে।
এ বিষয়ে ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ অবশ্যই রয়েছে। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কলেজ প্রশাসন থেকে যদি এমন প্রস্তাব আসে, তবে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে সম্ভব হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল