পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সড়কে চোখ ধাঁধানো গাছে গাছে লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সমারােহ। যেন এক রঙিন ফুলের রাজ্য। দূর থেকে তাকালে মনে হয়, বৈশাখের প্রখর রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি। সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন লাল হয়ে আগুন জ্বলছে। ঠিক যেন রং তুলিতে আকা শিল্পীর ছবির মত। সেলফির হটস্পট খ্যাত কলাপাড়া আন্ধার মানিক নদীর ওপর নির্মিত সেতুর টোলপ্লাজার মাত্র কয়েকশ গজ দূরে এমন দৃশ্য। পর্যটকসহ পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করছেন এই সৌন্দর্য। আর প্রকৃতির এই মুগ্ধতা হাত ছাড়া করেনি স্থানীয় তরুণ তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষ। তারা কৃষ্ণচূড়া ফুলের সাথে মিশে যাওয়া সুন্দর মুহূর্তকে স্মাটফোনে ধারণ করে নেট দুনিয়া ছড়িয়ে দিয়েছেন আনেকে।
দর্শনার্থীরা জানান, তারা যতবার দেখেন, ততবারই লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের এমন সমারাহের দৃশ্যে মুগ্ধ হয়। প্রকৃতিক সৌন্দর্য হল বিধাতার এক অনন্য সৃষ্টি। আমাদের এই দেশ, সুজলা সুফলা, সবুজে ভরা, প্রকৃতির সৌন্দর্যে এক অপরূপ। প্রকৃতি নিজেকে রানীর মতো সাজিয়ে তোলে, আর এই সৌন্দর্যের চিত্র সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দেখা যায় গ্রাম বাংলায়।
তাদের ভাষ্যমতে, গ্রাম ও শহর থেকে দিন দিন কমে যাচ্ছে রঙিন এই গাছ। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহবান জানান।
উদ্ভিদবিদরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম গুলমোহর, তা কম লোকই জানেন। কিন্তু সবার কাছে কৃষ্ণচূড়া নামে পরিচিত। এটি একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া।এই গাছ চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচ‚ড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ। কৃষ্ণচ‚ড়া তিনটি রঙের হয়। যেমন লাল, হলুদ ও সাদা। অনেকটা জায়গাজুড়ে শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। লাল ও হলদে প্রজাতির কৃষ্ণচূড়ার গাছ অনেক জায়গাতেই দেখা যায়। তবে সাদা রঙের কৃষ্ণচ‚ড়া অতি দুস্প্রাপ্য।
স্থানীয়রা জানান, সেতুর টোলপ্লাজার মাত্র কয়েকশ গজ দুরে কুয়াকাটা মহাসড়কের দুই পাশে ১০/১২টি পরিণত বয়সের কৃষ্ণচূড়া গাছ রয়েছে। গাছগুলো বর্তমানে ফুলে ফুলে একেবারে আবৃত্ত। যার রক্তিম আভায় চোখ জুড়িয়ে যায় স্থানীয়সহ দেশি বিদেশি পর্যটকদের। তাই অনেকেই চলন্ত গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলেন। এ স্থানটি এতাটাই সুন্দর যেন, নজর সরানোর উপায় নেই।
এদিকে টোলপ্লাজা এলাকা আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের গাছের চারা লাগানোর পরিকল্পনা করছেন একাধিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন। পাশাপাশি জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ফোয়ারাটি সচল করারও দাবি জানান তারা।
টোলের শুল্ক আদায়কারী ব্যাবসায়ী নিখিল বিশ্বাসের তথ্যমতে ২০১৬ সালে ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ কৃষ্ণচ‚ড়া গাছগুলো রোপনন করে। এরপর স্থানীয়দের রক্ষণাবেক্ষণে গাছগুলো পরিনত বয়সে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নওভাঙ্গা ফাজেল মাদ্রাসার বাংলা বিভাগে প্রভাষক মো.ইভান মাতব্বর বলেন, এ সড়কে দুই পাশে আরও যদি কৃষ্ণচ‚ড়ার পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধন গাছ রোপন করা হয়, তাহলে কুয়াকাটায় আগত দেশী-বিদেশি পর্যটকদের কাছে দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠবে।
‘পাশে দাঁড়াই’ নামের স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি নয়নাভিরাম গাইন নয়ন বলেন, আমরা চাই এই স্থানীটিকে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্পটে পরিণত করতে। তাই ব্রিজ সংলগ্ন সড়ক দুই পাশেই ফাঁকা জায়গায় সংগঠনের পক্ষ থেকে সৌন্দর্য বর্ধন গাছের চরা রোপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ